লাইব্রেরিতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মিলিত হয়ে আছে নানা ধরনের পুস্তকের মাধ্যমে। লাইব্রেরি জ্ঞান ধারার মহামিলন ক্ষেত্র। লাইব্রেরি মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মেটায়, আনন্দ দান করে। সভ্যতার বিকাশে লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই। যেখানে লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে সেখানকার মানুষের কৃষ্টি-সভ্যতা, আচার-আচারণের উন্নতি সাধন হয়েছে।
যুগের চাহিদায় নগর সভ্যতা বিকাশে নির্মিত প্রসিদ্ধ সব লাইব্রেরি সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত আছি। কিন্তু গ্রামীণ জনপদে গড়ে ওঠা এমন সব লাইব্রেরির ইতিকথা কারণে-অকারণে প্রচারণা পায়নি। এমনই গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খামারবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরি।
হরিহর নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে খামারবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরি। এগিয়ে যেতেই দেখা যায়, পাঠকপ্রিয় এই লাইব্রেরিতে কিছু পাঠক সমাগম। উৎসুক মনে লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশ করে কিছু পাঠককে দেখে এই লাইব্রেরি সম্পর্কে জানার আগ্রহ হলো।
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে মানুষটি এই লাইব্রেরিকে আগলে রেখেছেন স্বপ্রণোদিত হয়ে, একান্ত নীরবে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এর দেখভাল করে যাচ্ছেন সে মানুষটি হচ্ছে জমিরুল ইসলাম। লাইব্রেরির জন্য নিজের পুরোটা সময় দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি জানান, এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক এমন কয়েক বিশিষ্টজন- আব্দুস সাত্তার মোড়ল, শামছুর রহমান, মতিয়ার রহমান খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা আকতার হোসেন খান, লৌলত হোসেন খান, ফজলুর রহমান মোড়লসহ কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯৬৬ সালে খামারবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই লাইব্রেরির আজীবন সদস্য ৮৩ জন আর সাধারণ সদস্য ২২০ জন। চাচের বেড়া ও গোলপাতার ছাউনির ঘর নির্মাণ করে এর যাত্রা শুরু হয়। যা পরে ইটের গাঁথুনি ও টিনশেডের ঘর হয়। এখন ছাদের ঘর ও সুন্দর পরিবেশে লাইব্রেরির কার্যক্রম সুচারুভাবে চলছে।
লাইব্রেরির সংগ্রহে রয়েছে ২ হাজার ৩৫৮টি হরেক রকমের বই। এই বিশাল গ্রন্থশালার বই রাখার জন্য ৪টি আলমারি ও ৪টি র্যাক রয়েছে। বই পড়ার জন্য বড় পরিসরের তিনটি টেবিল ও ২০টি চেয়ার রয়েছে। লাইব্রেরি ভবনটি বেশ পরিপাটি। ঘরের মেঝেতে বসানো হয়েছে আকর্ষণীয় টাইলস। মুক্তিযুদ্ধ কর্নারসহ এই লাইব্রেরিতে মুক্তিযুদ্ধের দলিল, রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল রচনাবলী, শরৎ রচনাবলী, বঙ্কিম রচনাবলী, ইসলামি বিশ্বকোষ, বিশ্বনবীর জীবন ও আদর্শ, সৈয়দ গোলাম মোস্তফা, ডা. লুৎফর রহমান, শার্লক হোমস, জীবনানন্দ দাসের রচনা সমগ্র, মনিষীদের জীবনী, আল-হাদিস ও আল-কোরআনের তরজমাসহ বিভিন্ন লেখকের উপন্যাস, কবিতা, গল্প, রম্যরচনা, খেলার বইসহ নানা ধরনের বই পাঠকদের জন্য সংগ্রহে রয়েছে বলে জানান লাইব্রেরির তত্ত্বাবধায়ক জমিরুল ইসলাম।
লাইব্রেরিতে আসা খুদে পাঠকদের মধ্যে খামারবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী মুর্শিদা আক্তার মুন ও মরিয়ম আক্তার তিশা জানান, তারা নিয়মিত পাঠক হিসেবে লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ার পর জমা দিয়ে আরেকটি নতুন বই নিয়ে পড়ে থাকে। এদিন তারা দুজন হাসান হাফিজের দশ দেশের রূপকথা ও রকিব হাসানের তুষার দানো বই সংগ্রহ করে।
অন্য আরেক পাঠক আবুল কালাম আজাদ মিলন বলেন, গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা খামারবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরি দেশের অন্য যে কোনো লাইব্রেরির সমতুল্য। এই পাড়াগাঁয়ের লাইব্রেরিতে বহুবিধ বই রয়েছে। আমি এ লাইব্রেরি থেকে নিয়মিত হরেক রকমের বই নিয়ে পড়ে উপকৃত হচ্ছি।
খামারবাড়ী পাবলিক লাইব্রেরির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মতিয়ার রহমান খান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এটি বেশ পুরোনো, প্রসিদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরি। যা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতি ও কৃষ্টি- সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। পাঠকপ্রিয় করার জন্য লাইব্রেরির শ্রী বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঝে মাঝে পাঠচক্র ও নানামুখী প্রতিভা বিকাশে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ লাইব্রেরিটি আরও প্রসিদ্ধ হবে এবং এই জনপদের মানুষ উন্নত সমাজ ও উন্নত জাতি গঠনে নেতৃত্ব পাবে।
মন্তব্য করুন