বিগত ৪৪ বছরের লড়াই সংগ্রামে সংগঠনের শহীদ নেতৃবৃন্দ এবং দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপ্লবী ধারার ছাত্রসংগঠন হিসেবে বিকশিত হয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম মিছিল সংগঠিত করা কিংবা স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রথম গ্রেপ্তার হওয়ার মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর তৎকালীন নেতাকর্মীরা।
এ সময় সংগঠনের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণে রেখে শোষণমুক্ত সমাজগঠন এবং গণমুখী শিক্ষার দাবি আদায়ে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী তার আপোষহীন সংগ্রামের ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে সংগঠনের শপথবাক্য পাঠ করান সংগঠনের সভাপতি দিলীপ রায়।
কর্মসূচির পরবর্তী অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জশদ জাকির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার শাহরিয়ার আলিফ এবং ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি তৈয়ব ইসলাম।
এ সমাবেশে বক্তারা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে একটি দীর্ঘসময় পার হয়ে গেলেও বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের কার্যকর কাঠামোগত সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পরিবর্তে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিক ও সীমান্ত হত্যা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং কূটনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে বাংলাদেশের জনজীবন এবং জাতীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সৃষ্ট সংকটের দিকে বিশেষ আলোকপাত করেন।
সংগঠনের সভাপতি দিলীপ রায় তার বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রের পুনর্গঠন এবং বিনির্মাণের সংগ্রাম এখনো চলমান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী গঠিত সরকার জনমানুষের সরকার হয়ে উঠতে পারেনি। বরং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে ব্যাপক শ্রমিক হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত প্রমাণিত হয়েছে এ সরকার মালিকশ্রেণির পক্ষের সরকার। পাহাড়ের আদিবাসী প্রশ্ন এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। ভারতীয় আগ্রাসন কিংবা মার্কিনমুখী মনোভাব কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না এবং দ্রুত কূটনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম, শ্রমিকের বকেয়া মজুরি প্রদান, শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিকীকরণের যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে রাষ্ট্রকে অবশ্যই গণমানুষের হয়ে উঠতে হবে। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক বিভাজনই কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
মন্তব্য করুন