ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, আজমির শরীফ দখলের ষড়যন্ত্র এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে বাবরি মসজিদ দিবসে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে প্রতিবাদ র্যালি কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় সংগঠনটি ভারতীয় হাইকমিশনার বরাবর ছয় দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপিও প্রদান করে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় গুলশানের কূটনৈতিক জোনের ভারতীয় হাইকমিশন এলাকায় এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের, ঢাবি শাখার সদস্য সচিব ফাতিমা তাসনিম জুমা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভারতে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্তমান সরকার বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজস্ব নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিপর্যয়করভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও হিন্দুত্ববাদী জনতা মুসলিম, খ্রিস্টান এবং দলিত সম্প্রদায়ের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে, তারা ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনকেও রেহাই দেয়নি।
এছাড়াও, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদদের দ্বারা ধর্মীয় স্থানগুলো, বিশেষ করে গীর্জা এবং আজমির শরিফ দরগাহর মতো উপাসনালয়গুলোও ভেঙে দেওয়ার ক্রমাগত হুমকি এই অঞ্চলে অসহিষ্ণুতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ভারতীয় সরকারি বাহিনীর দ্বারা মণিপুরের আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন সমগ্র অঞ্চলজুড়ে অস্থিতিশীলতা এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
এতে আরও বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চ আশা করছে, ভারত সরকার তার নিকটতম প্রতিবেশীর নাগরিকদের উদ্বেগ স্বীকার করবে এবং শান্তির স্বার্থে সংকট সমাধানে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেবে।
স্মারকলিপিতে ইনকিলাব মঞ্চ ভারত সরকারের প্রতি ছয় দফা দাবি জানায়।
সেগুলো হলো- ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, ভারত সরকারকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন, কর্মকর্তা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার জন্য সরকার দুঃখ প্রকাশ করেছে, তবে সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, অপরাধীদের একটি স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে। ভারত সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, ভবিষ্যতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যেন কোনো বাংলাদেশি নিহত না হয়। সরকারকে অবশ্যই স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের বিচার করতে হবে। মণিপুরের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। ভারত সরকারের উচিত মণিপুরে ক্রমবর্ধমান সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা সহায়তা ইউনিটের (এমএসইউ) কাছে হস্তক্ষেপ চাওয়া। দলিত সম্প্রদায়, খ্রিস্টান, মুসলিম, শিখ এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্য ও সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় স্থান যেমন- গির্জা, মসজিদ এবং মাজারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, আজমির শরিফ দরগাহ ধ্বংস করার ক্রমবর্ধমান হুমকির অবসান ঘটাতে সরকারকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে এবং হিন্দুত্ববাদী জনতার হাতে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতার শিকারদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে।
মন্তব্য করুন