ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে তিন দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। এসময়ের মধ্যে দাবি না মানলে ভবনগুলোতে তালা লাগিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে (ভিসি চত্বর) ‘মেয়েদের হল নির্মাণ এবং ৭ কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ’ শীর্ষক কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম।
আলটিমেটাম দিয়ে আশিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এর আগেও অনেক আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে প্রতারিত হয়েছি। কিন্তু এবার আর আমরা আশ্বাসের মুলা ঝুলানো বিশ্বাস করছি না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার সময় দিচ্ছি, এর মধ্যে যদি অধিভুক্তি বাতিল না করা হয় তাহলে ৭৩ ঘণ্টায় গিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেব।
তিনি আরও বলেন, এ ৭২ ঘণ্টায় আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে যাব। গণসংযোগ করে সবাইকে সচেতন করে তুলব। এরপরেও আমাদের দাবি না মানা হলে প্রয়োজনে ২০১৯ সালের মতো সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেব।
ঢাবির বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দিবা কালাম বলেন, যেখানে ঢাবির কোনো শিক্ষার্থীই চায়না, সাত কলেজ আমাদের সঙ্গে থাকুক, সাত কলেজও চায় না তারা অধিভুক্ত থাকুক, তাহলে ঢাবি প্রশাসন কোন অভ্যন্তরীণ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এখনো এমন সিদ্ধান্তে বহাল আছে তা আমাদের কাছে স্পষ্ট করতে হবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনো স্থাপনার জন্য ইট গাঁথা হয় সেটা কেবলই মেয়েদের হল নির্মাণের জন্য হবে, কোনো অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়।
সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপদেষ্টা পরিষদ কারা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ আবাসিক সুবিধা নেই। যেখানে আমরা দাবি করছি, মেয়েদের জন্য একটা হল নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু সেসব না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই না কি সাত কলেজের জন্য আলাদা অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। আমরা এত সহজে এসব মেনে নেব না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের প্রহসন সহ্য করা হবে না। অবিলম্বে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করে দিতে হবে। যদি আমাদের দাবি না মানা হয় তাহলে আমরা সব ভবনে তালা লাগিয়ে দেওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবো।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের ‘এফিলিয়েশন নো মোর’, ‘অধিভুক্তির ব্যবসা বন্ধ করো, করতে হবে’, ‘অবিলম্বে অধিভুক্তি-বাতিল করো, করতে হবে’, ‘মেয়েদের জন্য হল নির্মাণ-অবিলম্বে করতে হবে’ ইত্যাদি সংবলিত স্লোগান দিতে দেখা যায়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ করেন তারা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি করে আসছিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সাত কলেজকে অধিভুক্ত রেখে ঢাবির অভ্যন্তরেই তাদের জন্যে আলাদা প্রশাসনিক অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায়।
মন্তব্য করুন