রেজওয়ান রনি, রংপুর
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা খুব জরুরি

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে বিজ্ঞান ও ধর্মের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাস্তবমুখী, সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠার যে শিক্ষাব্যবস্থা, তা তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তিনি বলছেন, আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য যতখানি সার্টিফিকেট অর্জন, তার চেয়ে অনেকখানি কম মানুষ হওয়া। অথচ আমাদের লক্ষ্য হওয়ার দরকার ছিল মানুষ হওয়া।

এ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের সময়টাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর স্মৃতি অনেক মধুর। ধরুন, ২৫ বছর আগের কথা। ওই সময়টা বিদ্যালয়, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক—এই চারে যেমন দারুণ একটা সমন্বয় ছিল, তেমনি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, স্নেহ, শাসনও ছিল বেশ কড়া। একাডেমিক শিক্ষায় ছিল বর্ণনাভিত্তিক। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় গড়ে তোলার ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলছে। এতে মানবিকতা অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার সঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও।’

রংপুরের বদরগঞ্জের লোহানী পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একটি মারাত্মক ক্ষতিকর দিক হলো কম পড়ে সহজে পাস করার জন্য অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পরিহার করে ঝুঁকে পড়ছে নোট-গাইড বা সহপাঠের দিকে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আরেকটি সমস্যা হলো পাবলিক পরীক্ষা বৃদ্ধি। আমাদের দেশে আগে দুটো পাবলিক পরীক্ষা ছিল, এখন হয়েছে চারটি। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ একে সমর্থন করেন না।’

রংপুর আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোফাখখারুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘ ওই সময়ের স্কুল বলেন আর স্যারদের কথাই বলেন, তাদের আমরা বাঘের মতো ভয় পেতাম। ক্লাস ফাঁকি তো দূরের কথা স্যারদের সামনে দিয়েও হেঁটে যেতে ভয় পেতাম। আমাদের যেমন শাসন করা হয়েছে, তেমনি স্নেহও করেছেন তারা। পড়ালেখা না পারলে ভীষণ মার খেতেও হয়েছে। কিন্তু সেটি বাড়িতে বাবা-মাকে বলা তো দূরের কথা মুখে আনার সাহসও পেতাম না। স্যারদের ভয়ে রাতেই পড়া মুখস্থ করে যেতাম।’

কিন্তু মজার বিষয় হলো, স্যারদের দেওয়া পড়া শেষ করে স্কুলে গেলে তাদের চেয়ে ভালো বন্ধু যেন আর কেউ ছিল না। সুতরাং ওই সময়ের শিক্ষার্থীদের ৯৫ ভাগই সফল। তাই আমি মনে করি, শিক্ষকদের শাসন করার স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন শিক্ষকদের আগের মতো শ্রদ্ধা করা হয় না। সেনিয়ে নানা কথা থাকতে পারে।

রংপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, এখন তো খুব একটা ক্লাস নেই। স্যারদের সঙ্গে একটু ভালো সম্পর্ক থাকলেই অনেকে অনেক সুবিধা পাচ্ছে। এমনকি পরীক্ষায় নম্বর পর্যন্ত বেশি দেওয়া হচ্ছে।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাকেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল; সেখানে কোনো গবেষণা নেই। কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কলেজের সঙ্গে আলাদা করা যায় খুব কম।’

রংপুর সরকারি কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এম এ রউফ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই আমাদের যুবসমাজকে প্রকৃত অর্থে সৎ, দক্ষ ও কর্মমুখী আত্মনির্ভরশীল স্বয়ংসম্পূর্ণ নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক এবং দেশপ্রেমিক অর্থাৎ উৎপাদনশীল মানবসম্পদে পরিণত করতে পারেনি। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা যুক্তির ব্যবহার থাকলেও প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষার অভাব রয়েছে। আর ২০০০ সালের আগে শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী বা তথ্যপ্রযুক্তিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও সেখানে নৈতিকতা মূল্যবোধ, মানবিকতা, দেশপ্রেম অর্থাৎ প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা ছিল।’

বদরগঞ্জ কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী নয়। আমাদের এ শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা যে ধরনের পাঠ্যপুস্তক পড়তে চায়, গবেষণার মাধ্যমে সেগুলো খুঁজে বের করে শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইটিভি-সিজেএফবি সংগীত-সাংবাদিকতা এবং চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান / সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, ফাহিম আহমেদ এবং জয়া আহসান 

রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ৯৭৯ মামলা 

সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ডিসি কর্তৃক গালাগালের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম কমাতে আলটিমেটাম

‘জনশক্তি’ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি : জাতীয় নাগরিক কমিটি

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড আর নিরাপদ নয়’ : ইয়েমেন

লন্ডনে বড় মেয়ের বাসায় রয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ

দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে প্রাণ গেল বাবা-ছেলের

রাখাইনে সেনা সদর দপ্তর দখল আরাকান আর্মির

‘অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল’-এর আয়োজন করল ব্র্যাক ব্যাংক

১০

গাজীপুরে ট্রাকচাপায় বাইকের দুই আরোহী নিহত

১১

আমরা আল্লাহর ওপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারত : দুলু

১২

কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের

১৩

সহসমন্বয়ক সাজিদুলকে জড়িয়ে কালবেলার নামে ভুয়া ফটোকার্ড

১৪

উপদেষ্টা হাসান আরিফের দাফন সোমবার

১৫

সামাজিক ন্যায়বিচারে রুবী গজনবী পুরস্কার জিতল নারীপক্ষ

১৬

‘স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়, সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বন্ধুত্ব রাখতে চাই’

১৭

ইউক্রেনের ৬ দূতাবাসে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

১৮

‘আমি অপেক্ষায়, আমার বাবা আর ভাত খেতে আসে না’

১৯

আজ কেন বছরের দীর্ঘতম রাত?

২০
X