সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৮৭ সালে ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই পা প্যারালাইজড হয়ে যায় ফয়সাল রহমান জসীমের। এ শরীর নিয়ে অদম্য ফয়সাল পড়ালেখা চালিয়ে যান। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সুস্থ হওয়ার পরে ২০০৭ সালে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পড়ালেখায় মনোযোগী করে তোলায় শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কর্মদক্ষতা দিয়ে জয় করেন নিজের প্রতিবন্ধকতাকে। ২০১৪-১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধিতার ওপর পিএইচডি করেন তিনি।
গড়ে তুলেছেন প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিদ্যালয়ে, যার নাম প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য একটি সংস্থাও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশ-বিদেশে নিয়েছেন প্রশিক্ষণ। বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধীদের মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেন। শিক্ষাজীবন থেকে এখন পর্যন্ত নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েও কখনো থেকে যাননি।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্য শিক্ষকরাও তাকে সব কাজে উৎসাহিত করেন। হুইলচেয়ারে বসা থেকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ায়ও সহকর্মীরা সহযোগিতা করছেন। শিক্ষার্থীরা তার প্রসংশায় পঞ্চমুখ।
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ফয়সাল রহমান জসিম স্যার আমাদের সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাস নেন। তিনি অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। তার পাঠদানে আমরা সন্তুষ্ট। তিনি পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি আমাদের দেশ-বিদেশের নানা বিষয়ে জ্ঞান দান করেন।
শিক্ষার্থী রাহাত জানায়, স্যার একজন প্রতিবন্ধী, তবু তার সব বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে। তিনি আমাদের শুধু শিক্ষকই নন, একজন অভিভাবকও।
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাঈনুল ইসলাম মান্না বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েও ফয়সাল রহমান জসিম শিক্ষকতায় সুনাম অর্জন করেছেন। শিক্ষার্থীদের আস্থা ও ভরসাস্থল তিনি। সবসময় তার সফলতা কামনা কামনা করি।
ফয়সাল রহমান জসিম বলেন, প্রথমে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পাই; কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে সে চাকরি ছেড়ে দিই। পরে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি পাই। এখন সেখানেই শিক্ষকতা করছি। একজন প্রতিবন্ধী হলেই যে তিনি সমাজের বোঝা, আমি এটা মানি না। সমাজ উন্নয়নে সব মানুষের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। আমি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছি। তাদের উন্নয়নে আমৃত্যু কাজ করে যাব।
মন্তব্য করুন