গাইবান্ধা ফুলছড়ির বাদুড়িয়া গ্রামের আলোচিত এক টাকার মাস্টার মো. লুৎফর রহমান (৭৪)। কখনো হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে ৫০ বছর ধরে জ্ঞান বিলিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফুলছড়ির গুনঘড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে মেট্রিক পাস করেন।
নিজে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে না পারার আক্ষেপ থেকে শিশুদের ঝরে পড়া রোধে বিনা পয়সায় পড়ানো শুরু করেন তিনি। পরে অভিভাবকদের অনুরোধে এক টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া শুরু করেন। এখন এক টাকার মাস্টার হিসেবে পরিচিত এই বিদ্যানুরাগী। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত চালিয়ে যেতে চান তার জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কাজ।
এতে তিনি বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন গাইবান্ধা জেলায়। পুরস্কারও পেয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে।
লুৎফর রহমান বলেন, ১৯৭২ সালে মেট্রিক পাস করার পর পরিবারের অভাব অনটনে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আমি গ্রামের অসহায় ও গরিব ছেলেমেয়ে, যারা টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারত না, তাদের বাড়ি বাড়ি হেঁটে বা সাইকেলে করে বিনামূল্যে পড়াশোনা করাতাম। তারপর অভিভাবকদের অনুরোধে এক টাকা করে গ্রহণ করি।
আরেক শিক্ষক নুরুল আলম। তিনি আলো ছড়িয়ে দিতে চান জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। জানা যায়, ১৯৭৩ সালে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নুরুল আলম। ১৯৮০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি জাতীয় পর্যায় শ্রেষ্ঠত্ব ও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
তিনি ২০০০ সালের আগের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কালবেলাকে বলেন, বাঞ্চিত আচরণ অর্জন করাটাই হলো প্রকৃত শিক্ষা। ওই সময়ে বইগুলোতে অনেক কিছু শেখার ছিল। শিক্ষার্থীরা ছিল বই পাগল। শিক্ষকদের প্রতি ছিল ছাত্রদের গভীর শ্রদ্ধা। শিক্ষার প্রতি অনুরাগী ছিল ছাত্ররা। পরনে কাপড় ছিল না, বইপত্র কিনতে পারত না অসহায় পরিবারের শিশুরা।
২০০০ সালের আগের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রবীণ ছাত্র আসাদুজ্জামান মামুন স্মৃতিচারণ করে কালবেলাকে বলেন, আমরা যে সময় পড়াশোনা করেছি, সে সময় ব্যাপক প্রতিযোগিতা ছিল। তখন ক্লাসের যে পড়াগুলো হতো, সেখান থেকে আমরা সাহায্য পাইতাম।
২০০০ সালের আগের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রবীণ ছাত্র আরিফ আলাল কালবেলাকে বলেন, তখন পিতা-মাতার পরই শিক্ষকদের দেখা হতো। ছিল শিক্ষকদের স্নেহ ও শাসন। এজন্য তাদের এই শাসনকে খুব শ্রদ্ধা ভরে গ্রহণ করত।
সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা সুনাগরিক তৈরি করতে পারছি না। সমস্যার সমাধানে দক্ষ জনবল তৈরি করা প্রয়োজন।
সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রাফি কালবেলাকে বলে, পরীক্ষার আগের দিন যদি প্রশ্ন বলে না দিত, তাহলে ভালো হতো। আর মাঠে দোকানে সরাসরি যদি না যেতে হতো, তাহলে ভালো হতো। এভাবে বাস্তবভিত্তিক পড়াশোনা করতে গিয়ে অনেক অপদস্থ হতে হয়েছে।
মন্তব্য করুন