আওয়ামী লীগের আমলা ও ব্যবসায়ীদের উৎখাতসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রনি বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনার পতন ঘটিয়েছি তখন কিন্তু আমরা কোনো আইনের তোয়াক্কা করিনি। আজকে যারা ৫-১০ কোটি টাকার বিনিময়ে ডিসিদের নিয়োগ দিয়েছে, তাদের কিন্তু ছাড় দেওয়া হবে না। গণঅভ্যুত্থানের দুই মাস পেরিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পেছনে যেসব সিন্ডিকেট রয়েছে তারা এখনো সক্রিয় রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখিনি। উপদেষ্টাদের বলতে চাই, যদি রাষ্ট্র চালাতে ব্যর্থ হন; দায়িত্ব ছেড়ে দেন, জনগণের সঙ্গে তামাশা করবেন না। খুনি হাসিনার মতো চটকদার কথা আর শুনতে চাই না, আমরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই।’
সহ-সমন্বয়ক বাবু খান বলেন, ‘যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ গঠন করেছিলাম তা এখন পর্যন্ত সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কোনো দৃশ্যমান কাজ দেখা যায়নি। শেখ হাসিনার পতন হলেও এখনো সচিবালয়ে শেখ হাসিনার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েই গিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তাদের অপসারণ করা হয়নি। যেমনভাবে আমরা শেখ হাসিনাকে চাইনি, তার নিয়োগপ্রাপ্ত আমলাদেরও আমরা চাই না। সরকারের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করছি, অবিলম্বে আওয়ামী লীগের দোসর এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণ করুন।’
সচিবালয়ের অবস্থা গণভবনের মতো হবে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা আবু তৈয়ব হাবিলদার বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরের রক্ষক আওয়ামী সচিব ও অফিসার এখনো সচিবালয়ে রয়ে গিয়েছে। তাদের এভাবে রেখে তো বাংলাদেশ চলতে পারে না, অবিলম্বে তাদের অপসারণ করুন। সরকারকে বলতে চাই, যদি এসব আমলাকে সচিবালয় থেকে সরানো না হয় গণভবনের মতো পরিণতি হবে সচিবালয়ের।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘সচিবালয়ে আনসার প্রবেশ করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা সেখানে ক্যু করতে গিয়েছিল। আমরা দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলতে চাই না, আর আওয়ামী পুনর্বাসন করতে চাই না। আমরা যেভাবে সচিবালয়কে রক্ষা করতে গিয়েছিলাম, ঠিক একইভাবে দালাল স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে ফের সচিবালয়ে যাব।’
এ সময় তিনি পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—
আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ী অঙ্গন থেকে স্বৈরাচারের দোসর দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে; গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে; যে সরকারি চাকরির জন্য কোটা সংস্কার হয়েছে সে বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (পিএসসি) আগের অবস্থায় বহাল রয়েছে। সেই পিএসসিকে সংস্কার ও চেয়ারম্যানকে অব্যহতি দিতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অব্যহতি ও দুদক সংস্কার করতে হবে; দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে আনতে হবে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ করতে হবে; সেনাবাহিনীতে সংস্কারসহ, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সেনাবাহিনী সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের যে সিন্ডিকেট রয়েছে তা ভেঙে দিয়ে দালালদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মন্তব্য করুন