উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বর্তমানে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা—সব বিভাগেই শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। তবে সেটিকে ‘অপশনাল’ (ঐচ্ছিক) করার চিন্তাভাবনা চলছে। সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক সভায় আইসিটিকে ঐচ্ছিক করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সূত্র জানায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর এনসিটিবিতে শিক্ষাক্রম বিষয়ে একটি সভা হয়। সভায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান, ঢাকার বিভিন্ন স্বনামধন্য কলেজের অধ্যক্ষ এবং তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে আইসিটির সিলেবাসের রূপরেখা প্রণয়নের ব্যাপারে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করে দেওয়া পাঠ্যবই পরিমার্জন টিমের সদস্য রাখাল রাহা জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে আইসিটি বিষয়টি থাকবে না। উপস্থিত শিক্ষক প্রতিনিধিরা এর প্রতিবাদ জানান। এমন পরিস্থিতিতে এনসিটিবি চেয়ারম্যান এবং রাখাল রাহা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পরবর্তী সভা হবে।
সূত্র আরও জানায়, চার দিন পর পরবর্তী সভার খবর জানতে এনসিটিবিতে যায় আইসিটি শিক্ষকদের একটি গ্রুপ। তাদের বোর্ড থেকে জানানো হয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকদের ফোন দিয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষকদের ওই গ্রুপ এনসিটিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে যায়। আবার এনসিটিবির আইসিটির জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত পর্যালোচকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তবে তারা বিষয়টি নিয়ে কিছুই করতে পারবেন না বলে তাদের জানানো হয়।
এক আইসিটি শিক্ষক বলেন, ছাত্রদের কোনো সুবিধার কথা চিন্তা না করে খুবই বাজে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এনসিটিবি, যা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ হবে। তিনি বলেন, আইসিটি নিয়ে ছেলেখেলার মূলহোতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন ও রাখাল রাহা। কামরুল হাসান মামুন বারবার বলছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইসিটি শিক্ষকের অপ্রতুলতার কথা। শিক্ষকের অপ্রতুলতা আর ফেলের (অকৃতকার্য) হারের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে ইংরেজিকে সর্বপ্রথম অপশনাল করে দিতে হবে।
আরেক শিক্ষক বলেন, বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। সেখানে আইসিটি বিষয়টির কদর অনেক বেশি। যেখানে আইসিটি বিষয়টি সব বিভাগের জন্য কমন রেখে এর পরিধি বাড়ানো দরকার ছিল, তা না করে উল্টো এটিকে অপশনাল করার চিন্তা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। এতে বিষয়টি গুরুত্ব হারাবে।
এনসিটিবির ওই সভায় রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা ও পাঠ্যবই পরিমার্জন কমিটির সদস্যরা।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে আইসিটিকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি। অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম কালবেলাকে বলেন, সেখানে (এনসিটিবির সভায়) অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে আইসিটি বিষয় না রাখার কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি অপশনাল করা যায় কি না, শুধু সেটি আলোচনা হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে পাঠ্যবই পরিমার্জন টিমের সদস্য রাখাল রাহা কালবেলাকে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে আইসিটি বিষয় বাদ দেওয়ার কোনো আলোচনাই হয়নি। পাঠ্যবই থেকে আইসিটি বাদ দেওয়া তো অসম্ভব। তবে এটিকে অতিরিক্ত বিষয় করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যদিও তা চূড়ান্ত নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির উচ্চ মাধ্যমিক শাখার বিশেষজ্ঞ মো. নাসির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানি না। এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) ও চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে ভালো বলতে পারবেন।
এনসিটিবির এক সদস্য কালবেলাকে বলেন, আইসিটি বিষয়টি উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত সেদিন হয়নি। আসলে এমন কোনো আলোচনাই সেদিন হয়নি। আলোচনা হয়েছে, বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক না করে ঐচ্ছিক করা যায় কি না। সে বিষয়ে মতামত এসেছে। তবে এগুলোরও কোনোটিই চূড়ান্ত নয়।
একই কথা বলেছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, এটি একেবারেই প্রাথমিক আলোচনা। চূড়ান্ত কিছুই নয়।
মন্তব্য করুন