ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি ও জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সাবেক ঢাবি প্রতিনিধি আল সাদী ভূঁইয়া এবং স্টাফ রিপোর্টার নাহিদ হাসানের ওপর (নাহিদ সাব্বির) ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। একই সঙ্গে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি বলছে, অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রতিষ্ঠিত এক সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। যা একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন দেশ এবং এর জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের।
গত ০৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবাজারের বঙ্গ ইসলামীয়া সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের দ্বারা বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি ও জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সাবেক ঢাবি প্রতিনিধি আল সাদী ভূঁইয়া এবং স্টাফ রিপোর্টার নাহিদ হাসান।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি এক বিবৃতিতে বলেন, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার নাহিদ হাসান গত ০৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর বঙ্গ ইসলামীয়া সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলে মার্কেট মালিকের ছেলে সৈয়দ আসিফুল ইসলাম সজলের সাথে পূর্ব পরিচিত থাকায় সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য মার্কেটের ৪র্থ তলায় তার অফিসে যান।
সেখানে আলাপরত অবস্থায় হঠাৎ সজলের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জেরে মার্কেট দখল ও চাঁদাবাজি করতে শাহবাগ থানা বিএনপির ২০নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম স্বপন, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলির স্বামী আবুল হোসেন টাবু ও বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ ইউসুফের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা, রড, জিআই পাইপ, রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গিয়ে অতর্কিত হামলা করে।
এসময় আল সাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও নাহিদ নিজেদেরকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দিলেও সজলের ওপর হামলার পাশাপাশি তাদেরকেও মাথায় ইট, বাঁশ ও পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। একপর্যায়ে তাদেরকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে হাতে থাকা অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি মারধর করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম করে ও সাথে থাকা ৩টি মোবাইল, নগদ টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, ০৫টি এটিএম কার্ড, অফিস আইডি কপি এবং বাইকের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
হামলার খবর পেয়ে সাংবাদিক সমিতির অন্যান্য সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাংবাদিকরা সবসময় সত্য প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী, দেশ ও জাতির কল্যাণে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে তাদের পেশাগত কাজ করে থাকেন। আর মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র-এর আর্টিকেল ১৯ ও রাষ্ট্রীয় বিধানানুযায়ী দেশের প্রতিটি সংবাদকর্মীই স্বাধীনভাবে তাদের পেশাগত কাজ করার অধিকার রাখে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯নং অনুচ্ছেদেও চিন্তা, বিবেক, বাক, ভাব প্রকাশ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও আল সাদী ও নাহিদের ওপর এ হামলার ঘটনার মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ডুজা মনে করে, কেউ কোনো অপরাধ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তার উপর নিরপরাধ সংবাদকর্মীর ওপর ঘৃণ্য এই হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা দেশের আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে বলে আমরা খেয়াল করছি। এমনও হচ্ছে যে, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে ঢুকে সংশ্লিষ্টদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করা হচ্ছে। অধিকাংশ সময়ই এই দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায় না। যার কারণে, সাংবাদিকদের ওপর হামলার মতো ঘৃণ্য কাজটি দেশে প্রতিষ্ঠিত এক সংস্কৃতি হিসেবে রূপ নিয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক, লজ্জাজনক এবং উদ্বেগের।
হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক মাহি বলেন, যারাই আল সাদী ভূঁইয়া ও নাহিদ হাসানের ওপর এই বর্বর হামলার সাথে জড়িত ছিল তাদের সকলকেই অতি দ্রুত চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে আইনানুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।