ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন না। দেশের বিভিন্ন জায়গা বন্যাকবলিত। এই দুর্যোগের সময় এ বাহুল্য বর্জন করবেন।
তিনি বলেন, আমি পেশাজীবী হিসেবে দেশ, জাতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছু করতে চাই। দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) নতুন উপাচার্য হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির পর গণমাধ্যমের কাছে এ বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এটা সবার বিশ্ববিদ্যালয়। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। বুড়ো বয়সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতেও চাই না।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীরা মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। ক্যাম্পাসে ফিরে তারা যেন সুস্থভাবে আগের অবস্থায় ফিরতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
উপাচার্য বলেন, দুর্যোগের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম আগামীতে চালু রাখা হবে। প্রয়োজনে একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে এ ধরনের কাজ অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা সেটা দেখব।
উল্লেখ্য, ড. নিয়াজ আহমেদ খানের জন্ম ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের লোহাগড়ার চুনতি গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি ইনস্টিটিউট অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপউপাচার্য ও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক (গ্রেড-১) ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে এর সিনিয়র একাডেমিক অ্যাডভাইজার এবং সেন্টার অফ রিসোর্সেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন এলিজাবেথ হাউসে ‘দক্ষিণ এশীয় ফেলো’, ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রিসার্চ ফেলো’, মিসরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন কায়রোতে ‘ডিস্টিংগুইসড ভিজিটিং রিসার্চার’, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ইউমেনের ‘ডিস্টিংগুইসড ভিজিটিং প্রফেসর’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ‘অধ্যাপক’, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ‘এশিয়ান রিসার্চ ফেলো’ এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভারসিটির ‘ভিজিটিং স্কলার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আমেরিকান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, যুক্তরাজ্য সরকারের সোয়ানসি-বে রেশিয়াল ইকুইটি কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রকল্প ও কর্মসূচিতে উপদেষ্টা ও পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক ড. খান মর্যাদাপূর্ণ কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননাসহ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা সম্পাদন করেন। তিনি দুই শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ ও বইয়ের রচয়িতা। এ ছাড়াও তার তত্ত্বাবধানে বর্তমানে দেশে এবং দেশের বাইরের ১৭ জন পিএইচডি গবেষক এবং আটজন এমফিল গবেষক গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।
মন্তব্য করুন