প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সহোদর দুই ভাই সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ইচাইল গ্রামে। প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি সাখাওয়াত। মাদ্রাসায় পড়েছেন মাত্র কয়েক মাস। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা ছেড়ে প্রায় এক যুগ আগে গ্রামে অটোরিকশার এসিড পানির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বছর দেড়েক ব্যবসা করে সুবিধা করতে পারেননি।
এরপর এসএসসি পাস করা ছোট ভাই সায়েমকে নিয়ে ঢাকা চলে আসেন সাখাওয়াত। পরে রাজধানীর রাজারবাগ এলাকায় গিয়ে নতুন পানির ফিল্টার বিক্রি ও পুরোনো পানির ফিল্টার মেরামতের ব্যবসা শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম সাখাওয়াত এন্টারপ্রাইজ। সেটির সিইও হিসেবে পরিচয় দিতেন সাখাওয়াত। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকাতেই।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে সাহেদ আলীর দুই ছেলে রয়েছেন। গ্রেপ্তার সহোদর দুই ভাই হলেন মো. সাখাওয়াত হোসেন (৩৪) ও সাইম হোসেন (২০)। গত ৮ জুলাই সিআইডির করা মামলার এজাহারভুক্ত ১৪ ও ১৫ নম্বর আসামি তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরের দিঘারকান্দা বাইপাস এলাকার কাদুরবাড়ি মোড়ে রয়েছে সাখাওয়াতের বাবা শাহেদ আলীর দোকান। সাহেদ আলী প্রায় চল্লিশ বছর ধরে নিজের ওয়েল্ডিংয়ের দোকান পরিচালনা করেন। সংসার চালানো জন্য এখনো চলছে তার জীবনযুদ্ধ। গ্রামে বাবা শাহেদ আলী জীবনযুদ্ধে লড়তে থাকলেও দুই ছেলে সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন ঢাকায় কাটান বিলাসী জীবন। ঘুরে বেড়ান এশিয়া ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।
এদিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ইচাইল গ্রামে, নিজের বাবার ঘরটি জরাজীর্ণ, এখনো নিজের আধা-পাকা ঘরের বারান্দায় প্লাস্টার সম্পন্ন করতে পারেননি। থাকেন আকুয়া বাইপাস এলাকায় ভাগ্নির বাসায়।
সাখাওয়াতের প্রতিবেশী গিয়াস উদ্দিন বলেন, নিজেরা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ ও বিলাসী জীবনযাপন করলেও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের কোনো কিছুই বুঝতে দেয়নি পরিবার ও এলাকাবাসীকে। কিন্তু প্রায়ই বিদেশ সফর আমাদের আশ্চর্য করেছে। যারা নিজের বাড়ি ঠিক করতে পারে না, তারা কীভাবে বিদেশ ঘুরে বেড়ায় সেটি রহস্যজনক। বছরে দুই ঈদে পরিবার নিয়ে বাড়িতে আসতেন দুই ভাই। গত দুই বছর ধরে ঈদে ঢাকা থেকে দামি একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার নিয়ে আসতেন বাড়িতে। এতে এলাকার মানুষের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১১ লাখ টাকায় প্রাইভেটকারটি কেনেন বলে জানা যায়। এলাকায় তারা ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত।
তবে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তারে রীতিমতো হতবাক। কিন্তু অল্প দিনে এ পরিবর্তন অস্বাভাবিক মনে হয়েছে বলে জানান প্রতিবেশীরা। তবে ঘটনা সত্য হলে তদন্ত করে বিচার করা হোক সাখাওয়াত ও সায়েমের।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সাখাওয়াতের বাবা সাহেদ আলী কালবেলাকে বলেন, আমার ছেলে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত থাকলে তার ব্যবসা কে দেখত? সে চক্রে জড়িত নয়। তারা যে ব্যবসা করে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে বসে থাকতে হয়, মেরামতের কাজে যেতে হয়। আমার ছেলেরা ব্যবসায় যেহেতু এগিয়ে যাচ্ছে, সে জন্য তাদের দাবিয়ে দেওয়ার জন্য এসব কথা বলছে। তাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে বিদেশ সফর করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাখাওয়াত এসব ব্যাংক ঋণের টাকায় করেছে। ব্যাংকের ঋণের টাকায় ব্যবসা করে, ওদের কোনো টাকা নেই। ব্যাংকে প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। সাখাওয়াত একাই ব্যবসা করত ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হয়েছে তার। আমি আমার জমি বিক্রি করে দোকান দিয়েছি।
চার ভাই-বোনের মধ্যে সাখাওয়াত সবার বড় এবং সাইম সবার ছোট। সাইম ২০১৮ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও আর পড়াশোনা করেননি। গত দুই বছর আগে সাইম বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হন। সাখাওয়াতের এক বোন চাকরি করেন ঢাকার একটি ব্যাংকে, ছোট বোন পড়ছেন ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে।
সাখাওয়াতের ফেসবুক আইডিতে দেখা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে তিনি হঠাৎ বিদেশ সফর শুরু করেন। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত একেকটি বিদেশ সফরের ছবি প্রকাশ করতেন।
মন্তব্য করুন