সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারিকৃত সরকারি পরিপত্রের অংশবিশেষ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে গভীর উদ্বেগ ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপি জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান এবং যুগ্মআহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারিকৃত সরকারি পরিপত্রের অংশবিশেষ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনগ্রসর ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সমাজে এগিয়ে আনার জন্য কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যখন সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা চালু হয় তখন দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার, চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা কোটাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে সে আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরি (নবম-ত্রয়োদশ গ্রেড) থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে। কিন্তু গত ৫ জুন ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগ আপাতত এ রায় বহাল রাখে। ২০১৮ সালের পরিপত্রের অংশ বিশেষ বাতিল করে দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে পুনরায় চাকরিপ্রত্যাশী এবং শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছে, আমরা মনে করি তা ন্যায্য ও যৌক্তিক। কারণ কোটা কখনোই মেধার বিকল্প হতে পারে না।
নেতারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান। তাদের অবদানের স্বীকৃতি এবং সম্মান জানানোর অন্য আরও অনেক বিকল্প আছে। সে বিকল্পগুলো বংশ পরম্পরায়ও চলতে পারে। কিন্তু তা না করে চাকরিতে বংশ পরম্পরায় ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা অযৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। কারণ এর ফলে বেকার সমস্যা যেমন প্রবল হবে, তেমনি তুলনামূলকভাবে যোগ্য ও মেধাবীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। এটি এক ধরনের বৈষম্যও বটে। মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের সঙ্গেও তা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাব্যবস্থা পুনবর্হালের সঙ্গে বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের যোগসাজশ রয়েছে। আদালতের রায়কে ব্যবহার করে সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে নেতারা আরও বলেন, কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের চলমান যৌক্তিক ও ন্যায্য আন্দোলনকে সম্মান জানিয়ে কোটাব্যবস্থা বাতিলসহ অবিলম্বে তাদের চার দফা দাবিপূরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন