অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’- কে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে দ্বিতীয়দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও যোগ দিয়েছেন। তবে বৃষ্টির কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি পালন করা না গেলেও বন্ধ ছিল সব ধরনের কার্যক্রম। এই আন্দোলনে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ বন্ধ থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।
শিক্ষকরা মূলত ৩টি দাবিতে আন্দোলন করছেন। এগুলো হলো- সর্বজনীন পেনশনসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপারগ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ডুটা) নেতারাসহ অন্য শিক্ষকরা কলা ভবনের মূল ফটকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের অংশ হিসেবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে ডুটা’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, অনেক ধরনের অপপ্রচার চলছে এ আন্দোলন নিয়ে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন করা হচ্ছে। মূলত, শিক্ষার্থীদের জন্যই এ আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। উল্টো প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে পুরো দেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে।
এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেন ডুটা সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া। শিক্ষকেরা তাদের বক্তব্যে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেন।
একই দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো লাগাতার কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সভা পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরে গাজীপুরে স্ব স্ব ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এদিকে উপাচার্য শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের জেরে টানা ৫৩ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সংগঠনগুলো। এরপরেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচির ব্যানার নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা।
বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন করিডোরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষকরা। বাকৃবি শিক্ষক সমিতির ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হয়। একই দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সভা করছে ৩য় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ ও কারিগরি কর্মচারী পরিষদ। এ ছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ফেডারেশনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় থেকে প্রত্যাহার, অভিন্ন নীতিমালা বাতিল ও কর্মকর্তাদের স্কেলসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন বাকৃবি অফিসার পরিষদ।
বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষকবৃন্দ। কর্মবিরতি কারণে প্রথম দিনের মতো গতকালও ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব কার্যক্রম, দাপ্তরিক কাজ ও গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রমসহ সব কিছু বন্ধ ছিল।
মন্তব্য করুন