নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে, সেটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। অবশেষে মূল্যায়ন পদ্ধতির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এনসিসিসির বৈঠকে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান কালবেলাকে বলেন, আমরা যেভাবে প্রস্তাব করেছিলাম, আগে যা যা ছিল, সেভাবেই থাকছে। ছোটখাটো কিছু সংশোধনীসহ মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়েছে। সভায় প্রস্তাবিত কাঠামো, নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ লিখিত এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক থাকছে।
চূড়ান্ত অনুমোদনের ফলে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হচ্ছে ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কার্যক্রম বলতে বোঝানো হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। আরও সহজ করে বললে হাতে-কলমে কাজ।
এর আগে গত মে মাসে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। সেটিই সোমবার চূড়ান্ত হয়েছে। এরও আগে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি কার্যক্রমভিত্তিক অর্থাৎ হাতে-কলমে মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ আর লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ করার চূড়ান্ত সুপারিশ করেছিল। পরে এর থেকে কিছুটা পরিবর্তন এনে লিখিত অংশের ওয়েটেজ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে সময় পাঁচ ঘণ্টা রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেটির নাম এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এ পরীক্ষা হবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে।
মাদ্রাসা ও কারিগরির বিশেষায়িত বিষয়ে আগের নিয়মে পরীক্ষা: বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাবলিক পরীক্ষায় ৫টি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাবলিক পরীক্ষায় ৫টি বিশেষায়িত বিষয়ের ওপর পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে অন্যসব বিষয়ের পাঠ্যবই রচিত হলেও এসব বিষয়ের বই এখনো লেখা হয়নি। তাই এসব বিষয়ে আরও দুই বছর সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে।
জানতে চাইলে এনসিসিসির সভায় উপস্থিত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ আলমগীর কালবেলাকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম চালুর সময়ে মাদ্রাসার পাঁচটি বিশেষায়িত বিষয়ের পাঠ্যবই রচিত হয়নি। সে কারণে এবারের পরীক্ষা ধরা যাচ্ছে না। এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) আমাদের জানিয়েছিল, তাদের আরও দুই বছর সময় লাগবে। যদিও মাদ্রাসার সঙ্গে জড়িত বিষয় বিশেষজ্ঞরা বিশেষায়িত বিষয়গুলোকে অক্ষুণ্ন রাখতে সুপারিশ করেছিল। তবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তো পরিবর্তন আসবেই। তিনি বলেন, আগামী দুই বছরও বিশেষায়িত বিষয়গুলোতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বই রচিত হলে পরের বছর থেকে একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে।
সভায় উপস্থিত থাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মামুন উল হক কালবেলাকে বলেন, কারিগরি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা পাঁচটি বিশেষায়িত বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। আগামী দুই বছরও একইভাবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশ নেবে। বই রচনার পর নতুন পদ্ধতি পুরোদমে চালু হবে।
অধ্যাপক মামুন উল হক আরও বলেন, সভায় শিক্ষামন্ত্রী আরও একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিতে বলেছেন। সেটি হলো—প্রতিটি ইউনিটে শিক্ষার্থীদের যে দক্ষতা তা ডট (.) দিয়ে পরিমাপ করা হচ্ছে। ফলে সেটি অনেকের জন্যই দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য সহজ করার সুবিধার্থে এর সঙ্গে পরিমাপক বোঝানোর জন্য যে কোনো লেটার বা চিহ্ন যোগ করা যায়। আগামী ১৫ আগস্টের পরে আরেকটি সভা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে কাঠামো, নীতি, পদ্ধতি সব আগের মতোই থাকবে।
মন্তব্য করুন