ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দর্শন বিভাগের এক শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার হলে রোল নম্বর টুকে নেওয়ার মতো অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে ওই শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, এর আগে পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দিতে হুমকি দেওয়া ও এক নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
অভিযোগকারী এ শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগের ১৪তম ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. দিলওয়ার হোসেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই বিভাগেরই লেকচারার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তফা আবুল উলায়ী বরাবর পরীক্ষার হলে শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে একটি অভিযোগপত্র জমা দেন এ শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, তৃতীয় বর্ষের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ৩০৭ কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা কলাবভন ৫ম তলা কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালীন জান্নাতুল ফেরদৌস মিতা ম্যাম আকস্মিকভাবে টেবিলের সামনে এসে আমার প্রবেশপত্র টেনে পরীক্ষার রোল কলম দিয়ে উনার হাতের তালুতে টুকে নিয়ে যান। একইভাবে, পূর্ববর্তী ষষ্ঠ ও সপ্তম সেমিস্টারের ৪০৪ কোর্সেও তিনি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন। ফলে, ওই দুটি সেমিস্টারেই ম্যামের কোর্সে অভূতপূর্ব সিজি ড্রপ হয়, যার কারণ হিসেবে প্রবেশপত্রে ম্যামের এ রকম অশোভন হস্তক্ষেপকে দায়ী করছি।
তিনি বলেন, বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক পরীক্ষার হলে এ রকম অবস্থার শিকার হওয়ায় প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ম্যামের এরূপ আচরণের সম্ভাব্য প্রতিফলনের শঙ্কা এবং পরীক্ষায় অনিরাপত্তা নিয়ে অদ্যাবধি ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।
দিলওয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো যোগাযোগ নেই। আমার জানামতে তার সঙ্গে ওই রকম কোনো সমস্যাও হয়নি। তবে ওনার ক্লাস চলাকালে মাঝেমধ্যে আমি ওনাকে প্রশ্ন করি। সে জন্য উনার ক্ষোভ থাকতে পারে। বিগত ষষ্ঠ এবং সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা চলাকালেও উনি আমার প্রবেশপত্র থেকে রোল নম্বর নিয়েছেন এবং পরীক্ষার খাতায় নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসে মিতা কালবেলাকে বলেন, এই অভিযোগটা একেবারেই ভিত্তিহীন। আমার যদি তার রোল নম্বর টুকে নেওয়ারই দরকার হতো, এটা নেওয়ার অনেক পথ খোলা ছিল। হাজিরা শিট থেকেও আমি তার রোল নম্বর নিতে পারতাম, কেন তার সামনে থেকে নেব? এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।
তিনি বলেন, যিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তার আগে থেকেই একটা আক্রোশ ছিল। গত মিডটার্ম পরীক্ষার পরে পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তখন আমি তাকে বলেছিলাম যে, আপনি আমার ছাত্র হিসেবে আমাকে এভাবে হুমকি দিতে পারেন না এবং আপনি ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বজায় রাখুন।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে এই ছেলেটা এক মেয়েকে হয়রানি করেছিল, তখন মেয়েটা বিচার নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। ওই সময় আমি বিষয়টা আরেকজনের কাছে রেফার করে দিয়েছিলাম। সেই জায়গা থেকে তার একটা আক্রোশ ছিল। এ জন্য এসব অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ কাওসার মুস্তফা আবুল উলায়ীকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন