বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস থেকে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টি বাদ দেওয়ার সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ গণিত সমিতি।
সমিতির সভাপতি এবং পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রোববার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোমেনকে স্মারকলিপি দিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানান।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শরীফ হোসেন এবং বাংলাদেশ গণিত সমিতির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বাবুল হাসান, প্রফেসর ড. অমূল্য চন্দ্র মণ্ডল, প্রফেসর ড. মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর রায়হানা তসলিম, মো. রফিকুল ইসলাম ও কাজী খায়রুল বাসার।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন করে ছয়টি আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে পরীক্ষার নম্বর পুনর্বণ্টনপূর্বক গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয় সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কমিশন ৬টি আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নম্বর পুনর্বণ্টনের যে সুপারিশ করেছে, তাতে গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয় নেই। এটি বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সমাজ গঠনের পরিপন্থি বলে প্রতীয়মান হয়।
আমরা সবাই জানি, জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশে গণিতের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গণিত ছাড়া অচল। গাণিতিক হিসাব নিকাশ ব্যতীত একটি রাষ্ট্রের বাজেট থেকে শুরু করে যে কোনো ছোট-বড় দেশীয় বা বৈশ্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা অসম্ভব। কম্পিউটার বিজ্ঞান, পদার্থ ও রসায়ন ইত্যাদি বিজ্ঞানের সব বিষয়ের সারবস্তু হলো গণিত। গণিত একটি মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয়, যা প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ নীতি নির্ধারণ, আর্থিক পরিকল্পনা, পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ এবং সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গণিত ও মানসিক দক্ষতার চর্চা একজন সরকারি কর্মকর্তাকে যৌক্তিক ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনায় দক্ষ করে তোলে। প্রশাসনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে, জনশুমারি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিশ্লেষণ, কর ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গণিত অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। গণিত ও পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ ছাড়া কোনো কার্যকর নীতি গ্রহণ বা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রযুক্তিগত ও প্রকৌশল সংক্রান্ত, অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিষয়ে গণিতের প্রয়োজন হয়। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিজ্ঞানের সব বিষয়ের প্রতিনিধিত্বকারী গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়গুলোকে বিসিএসের সিলেবাসভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে বিপিএসসি কর্তৃক গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বাদ দেওয়া মানে সব শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষায় গণিতের গুরুত্বকে অস্বীকার করা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে গণিত বিমুখ করা।
লক্ষ করলে দেখতে পাব- বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিয়ে যে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে তা লিটারেচার বা সাহিত্যভিত্তিক। আমাদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত দক্ষতার চারটি ধাপ যেমন- জ্ঞান অন্বেষণ, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা গণিত এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে হাতে-কলমে অনুশীলনের সুযোগ রয়েছে।
সে কারণে বিজ্ঞান পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান ও বিসিএসসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টি বিসিএসের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত থাকা অত্যন্ত যৌক্তিক। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চললে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টি বিসিএস থেকে বাদ দেওয়া হলে আমরা আরও ১০০ বছর পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের পাশাপাশি বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সুদক্ষ বিসিএস কর্মকর্তা হয়ে দেশকে সেবাদানের লক্ষ্যে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়গুলো সিলেবাস থেকে বাদ না দিয়ে বহাল রাখার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন