মাহবুব আলম রিয়াজ, বুটেক্স প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা নেই বুটেক্সের আইপিই বিভাগে

বুটেক্সের আইপিই ল্যাবের খণ্ডচিত্র। ছবি : কালবেলা
বুটেক্সের আইপিই ল্যাবের খণ্ডচিত্র। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের ল্যাব নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। ল্যাবে জায়গার স্বল্পতা, আধুনিক মেশিনের অভাব, পুরাতন মেশিনের অচলাবস্থা, নষ্ট মেশিনগুলো মেরামত না করা, দক্ষ ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর না থাকাসহ নানা অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

ছোট একটি জায়গায় ওয়েলডিং, মেটাল শপ, মেশিন শপ ব্যবহারিক দেখানো হয়। ল্যাবে একসাথে গ্রুপভিত্তিক ২০ হতে ২৫ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে ক্লাস করে। স্থান স্বল্পতার কারণে ব্যবহারিক ক্লাসে মেশিনের গঠন, কার্যপ্রক্রিয়া, ব্যবহারবিধি বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বুঝতে সমস্যা হয়।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মেশিন শপ প্র্যাকটিস, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং, ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাফিক্স ব্যবহারিক কোর্সগুলো করতে হয়। মেশিন শপ প্র্যাকটিস ল্যাবে নেই পর্যাপ্ত আধুনিক মেশিন, যা আছে বেশিরভাগ পুরাতন। ল্যাবের পুরাতন শেপার মেশিন দিয়ে কাঠ কাটা গেলেও মেটাল জাতীয় পদার্থ কাটা যায় না। ওয়েল্ডিং মেশিনও পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেই। ল্যাবে সারফেস গ্রাইন্ডিং মেশিন, সিলিন্ড্রিকাল গ্রাইন্ডিং মেশিনের কাজ শেখানো হয় হ্যান্ড গ্রাইন্ডার, বেস গ্রাইন্ডার ও কাটিং স' গ্রাইন্ডার মেশিন দিয়ে।

ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাফিকস ল্যাবে কম্পিউটারগুলোতে সলিডওয়ার্কস ও অটোক্যাড সফটওয়্যারের আপডেটেড ভার্সন না থাকাসহ ল্যাবে কিছু সংখ্যক কম্পিউটার নষ্ট। আবার ল্যাবে শুরু থেকে ইন্সটল করা থাকেনা সফটওয়্যারগুলো, যার কারণে সব কম্পিউটারে ইন্সটল করতে সময় নষ্ট হয়।

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের করতে হয় ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস এবং ফান্ডামেন্টাল অব মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব। ল্যাবে ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন দীর্ঘদিন যাবৎ অকেজো। লেদ মেশিন দুটি থাকলেও সেগুলো খুবই পুরোনো। আবার ল্যাবে প্রজেক্টর না থাকায় শিক্ষকরা প্রয়োজনমতো স্লাইড দেখাতে পারেন না। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনে প্রেজেন্টেশন স্লাইড দিয়ে ক্লাস করানো হয়।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের ল্যাবে মেশিন বা সরঞ্জাম না থাকায় ব্যবহারিক কোর্সটি ক্লাসরুমে করতে হয়। ফলে হাতে কলমে শেখার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। কোর্সটির জন্য ল্যাবে বয়লার মেশিন, জেনারেটর, সেন্ট্রিফিউফগাল পাম্প, রেসিপ্রোকেটিং পাম্পসহ সিলেবাসের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত আরও মেশিনারিজ থাকার কথা জানান শিক্ষার্থীরা। এদিকে ল্যাবে কম্পিউটার নিউম্যারিকাল কন্ট্রোল (সিএনসি) মেশিন থাকলেও তা চালানোর জন্য দক্ষ প্রোগ্রামার বা ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নেই।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মেজারমেন্ট, ইন্সট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (এমআইসি) এবং প্রোডাক্ট ডিজাইন ল্যাব কোর্স করানো হয়। এমআইসি ল্যাবে ট্যাকোমিটার, লাইটমিটার, সাউন্ডমিটার, থার্মোমিটার, ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপ মেশিন একটি করে থাকলেও বাস্তবে তা চাহিদার তুলনায় কম।

ল্যাবে বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাফিস সারওয়ার খান বলেন, মেকানিক্যাল কোর্সের কোনো ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি আমরা ল্যাবে পাইনি। ক্লাসরুমে বসে স্লাইড দেখে ল্যাব শেখানো হয়। এমআইসি কোর্সের জন্য কয়েকটা বাদে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাবলি নেই।

৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহাদ বলেন, ল্যাবের অধিকাংশ মেশিনই সচল না। এতে ব্যবহারিকগুলো অনেকটা তাত্ত্বিক কোর্সের মত মনে হয়। ল্যাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গার সংকট রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাফিক্স ল্যাবের অনেক কম্পিউটারে সলিডওয়ার্কস, অটোক্যাডের মতো সফটওয়্যার কাজ করে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ল্যাবে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আমাদের সিলেবাসে ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস কোর্সে কাস্টিং প্রসেস টপিকটা থিওরিতে পড়ানো হলেও ল্যাবে ইকুইপমেন্ট না থাকায় এক্সপেরিমেন্টগুলো করানো হয় না। ফলে থিউরি বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়।

৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশফাকুল ইসলাম হিমেল বলেন, ল্যাবে কোর্স আউটলাইন অনুযায়ী বেশকিছু মেশিন নেই। যেমন: শেপিং মেশিন, হবিং মেশিন। কিছু মেশিন থাকার পরও নষ্ট। যেমন: ইলেক্ট্রো ডিসচার্জ মেশিন। মেশিন চালানোর জন্য দক্ষ অপারেটর সংখ্যা খুব কম। ল্যাবে স্থায়ী একটি প্রজেক্টর না থাকার কারণে প্রতিবার এটি সেটআপ করতে অনেক সমস্যা দেখা যায়।

এ বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মাদ রফিকুর রশিদ বলেন, এমআইসি ল্যাব করা হবে, সেখানে ম্যাটেরিয়াল হ্যান্ডেলিং, মেকানিকাল এবং এমআইসি এর কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করা হবে। সম্প্রতি চারটি নতুন মেশিন এই ল্যাবে সংযোজন করা হয়েছে। নতুন বাজেটে অর্থ বরাদ্দ পেলে আরও আধুনিক ও উন্নতমানের মেশিন কেনার এবং অচল মেশিনগুলো মেরামত করার পরিকল্পনা আছে।

ইন্সট্রাক্টরদের ট্রেনিং এবং দক্ষ ইন্সট্রাক্টরের সংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সহকারী টেকনিকাল অফিসারকে সিএনসি মিলিং মেশিন এবং ইঞ্জেকশন মোল্ডিং মেশিন এর ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। সামনে ইডিএম মেশিন এর ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করানো হবে। দক্ষ ইন্সট্রাক্টর এর সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছা আছে তবে আমাদের জনবল সংকটও আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিক্ষকদের কর্মবিরতি, ক্যাম্পাস ছাড়ছেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

ই-ক্যাব নির্বাচন / পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন টেকনিশিয়ানের সিইও সৈকত

কবরস্থানে মিলল ১০০ বস্তা বিদেশি চিনি

নেত্রকোনায় বাড়ছে নদ-নদীর পানি, সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

মিতু হত্যা মামলা : শেষ হলো ৫২ জনের সাক্ষ্য

ভারি বৃষ্টির পর মহারাষ্ট্রের রাস্তায় হাঁটছে কুমির!

৬৭১ বস্তা সরকারি রেশনের চাল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫

সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে বুটেক্স শিক্ষকরা

ইডেন নেত্রীর ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেন ছাত্রলীগ নেতা 

বাকৃবিতে শিক্ষকদের সর্বাত্মক ও কর্মচারীদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন

১০

১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য

১১

ভাবুন কতটা খারাপ বাবা ও কুৎসিত মানুষ আমি : নানা

১২

ছুটির দিনটি যেভাবে কাটালেন আর্জেন্টাইনরা

১৩

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ / ধর্ষণের কথা বাবাকে জানাবে বলায় কিশোরীকে সালোয়ার পেঁচিয়ে হত্যা

১৪

টিভিএস অটোতে চাকরি, পাবেন ভ্রমণ সুবিধা

১৫

জুনে নির্যাতনের শিকার ২৯৭ কন্যা ও নারী

১৬

হত্যা মামলায় কারাগারে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান

১৭

নবীন এসএসএলটি সদস্যদের নবীন বরণ ও মতবিনিময় সভা

১৮

বিপৎসীমার ওপরে সুরমার পানি, সিলেটে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

১৯

‘জনমানুষের রাজকুমারী’ ডায়ানার জন্মদিন আজ

২০
X