কুবি-৪ শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বে প্রায় দুমাস বন্ধ থাকার পর গত ২৩ জুন ক্লাসে ফেরেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষকরা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশনসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ তিন দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মবিরতির ঘোষণায় আবারও বন্ধ হচ্ছে কুবিসহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
ফলে তীব্র সেশনজটের শঙ্কায় কুবি শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বের পর এবার পেনশন স্কিমসংক্রান্ত দাবি আদায়ে ক্লাস বন্ধ হওয়ায় হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন।
গত ২৪ জুন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাবেন শিক্ষকরা। ৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রথম দফার আন্দোলনে পরীক্ষা আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সব ধরনের পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে। শিক্ষক ফেডারেশনের এ ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে কুবি শিক্ষকরাও ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে আবারও ব্যাহত হতে যাচ্ছে শিক্ষাজীবন।
কুবি শিক্ষার্থীরা জানান, করোনা মহামারি, শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্ব এবং শিক্ষক রাজনীতির কারণে এমনিতেই ধ্বংসের পথে তাদের পড়াশোনা। নতুন করে যোগ হয়েছে শিক্ষক ফেডারেশনের আন্দোলন। পরিবারের স্বপ্নপূরণের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে শিক্ষাজীবন শেষ করতেই সাত থেকে আট বছর সময় লেগে যাচ্ছে। সবাই নিজেদের স্বার্থ আদায়ে আন্দোলন করলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাইম কালবেলাকে বলেন, করোনায় সৃষ্ট সেশনজট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্ব। সে কারণে ক্লাস বন্ধ থাকে অনেকদিন। গত ২৩ তারিখ থেকে অল্প পরিসরে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে শুধু একাডেমিকভাবে পিছিয়ে পড়ব না, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়ব। যে সময় পড়াশোনা শেষ করে পেশাগত জীবন গড়ার কথা, সে সময় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করছি। যদিও এতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের একটু বেশি ক্ষতি হবে। আমাদের প্রশাসনের কারণে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। তবে দাবি আদায় হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষকদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানিতে কোনো আপস হবে না। যতদিন দাবি আদায় হবে না, ততদিন আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের কোনো নির্দেশনা আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত কোনো ধরনের ক্লাস নেব না। দাবি আদায় হলে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন শিক্ষকরা।
মন্তব্য করুন