বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে প্রতিবাদ জানান তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই, প্রতিবন্ধী ছাড়া কোটা নাই’, ‘সকল কোটা বাতিল হোক, মেধাবীদের চাকরি হোক’- সহ বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে উপস্থিত হয়।
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, আমি নিজে একজন শারীরিক অক্ষম ব্যক্তি হয়েও আমি এই কোটার বিরোধিতা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোটা থাকতেও আমি কোটার ব্যবহার না করেই সাধারণ মেধাতালিকায় ভর্তি হয়েছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নই, আমরা চাই তারা তাদের প্রকৃত সম্মান পাক। তবে তাদের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থী বঞ্চিত যেন না হয়।
আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা জানান, একজন নারী হিসেবে আমার প্রথম শ্রেণির চাকরিতে আমার জন্য কোটা বরাদ্দ আছে। তবুও আমি এই কোটার বিরোধিতা করছি। কারণ আমার মধ্যে যদি মেধা-দক্ষতা থাকে তাহলে নিজ যোগ্যতায় আমি চাকরি অর্জন করতে পারব। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মেয়ের সে সক্ষমতা আছে। পাকিস্তান আমলের যে বৈষম্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযোদ্ধরা শেষ করেছিলেন সেই বৈষম্য যদি তাদের প্রজন্মের মাধ্যমে ফিরে আসে সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম বলেন, সরকারের কাছে আহ্বান এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না যে সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে চান তাহলে তাদের স্বর্ণখচিত আবাসনের ব্যবস্থা করে দেন, তাদেরকে প্রতি মাসে লাখ টাকা সম্মানি দেন, দেশের ছাত্র সমাজ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে না। তবে, ছাত্রসমাজ সাধারণ শিক্ষার্থীর মেধার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোটার বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলবে। বাংলাদেশ বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে যে রক্ত দিয়েছিল কিন্তু আজ ২০২৪ সালে এসে এই বৈষম্যের স্বীকার হতে যাচ্ছে যা কোন সাধারণ শিক্ষার্থী মেনে নিবে না।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন, আগেও ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের আন্দোলন হয়েছে এবং বাতিল হয়েছিল। এরপরে ২০২৪ সালে এসে গতকাল হাইকোর্টের রায় দিয়েছে কোটা পুনর্বহালের। এমন হলে আবারও আন্দোলন গড়ে তুলবো। আমরা মেধাবীদের দিয়ে দেশ গড়তে চাই, অযোগ্যদের দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করতে চাইনা।
অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এহসানুল মারুফের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন