নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) খাবারের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাফেটেরিয়া, ভিস্তা ক্যাফে, হলের ডাইনিং এবং অভ্যন্তরীণ টং দোকানের খাবারের দাম শিক্ষার্থীদের অসন্তোষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম ও নিম্নমান এ অসন্তোষের মূল কারণ বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি নিকেতন ক্যাফেটেরিয়া একক দোকান হওয়ায় একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগে এই সমস্যা আরও বেড়েই চলেছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও কোথাও মানা হচ্ছে না নির্ধারিত মূল্য তালিকা।
সরেজমিনে শান্তি নিকেতনের ভিস্তা ক্যাফেতে গিয়ে দেখা যায়, মুরগি-ভাতের দাম ৭০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ ভাজা-বেগুন ভাজা এবং ভাত ৮৫ টাকা, সবজি ভাত এবং ডিম ভাত ৪৫ টাকা। একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতেও। মাছ-ভাত ৭০ টাকা, মুরগি-ভাত ৬৫ টাকা, সবজি-ভাত ৫০ টাকা, ভর্তা ভাতের প্যাকেট ৫৫ টাকা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পকেট গেট সংলগ্ন টং দোকানগুলোতেও একই দাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি উত্তরবঙ্গের একটি জেলার অতি সাধারণ পরিবার থেকে নোবিপ্রবিতে ভর্তি হই। বর্তমানে নিয়মিত ৩ বেলা খাবার খাওয়া আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য রাতে একটু দেরি করে ঘুমাই। সে অনুযায়ী, সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠি। এতে করে আমার সকালের নাশতার টাকা বেঁচে যায় এবং দুপুরের খাবারটা খেতে পারি। রাতে খুবই হালকা কিছু খাবার খাই। আমার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীই এমন করেন।
প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ঊষান ঋতু বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা। পরিবার থেকে খুব বেশি আর্থিক সাপোর্ট পাওয়া যায় না। তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অল্প টাকায় মাস শেষ করার তাগিদ অনুভব করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি আবাসিক হলের ডাইনিং বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় অভ্যন্তরীণ দোকান, বাইরের টং দোকান বা হোটেলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চড়া দামে নিম্নমানের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অতিদ্রুত আবাসিক হলগুলোতে ডাইনিং ব্যবস্থা চালু করে সুলভ মূল্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন খাবার পরিবেশনা করা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের টং দোকান বা হোটেলগুলোকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, যাতে খাবারের মান ও দাম ঠিক থাকে।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ হোসাইন জানান, খাবারের দামের সঙ্গে মানের কোনো সামঞ্জস্য নেই। বেশি টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া লাগে। তবুও বেশিরভাগ সময় খাবার থাকে নষ্ট। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নেই বললেই চলে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মচারী বেতন সবকিছু মিলিয়ে খাবারের দাম নির্ধারণ করা হয়। যার জন্য এর থেকে কম দামে খাবার বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান রিমন বলেন, নির্ধারিত মূল্যের বাইরে খাবার বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনিটরিং করে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
মন্তব্য করুন