চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতন ও পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত রাখার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের শিকার স্বাগত দাস চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্বাগত দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রোববার (২৯ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের রশিদ চৌধুরী আবাসিক হোস্টেলে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রক্টর বরাবর চিঠি দেন ভুক্তভোগী স্বাগত দাস। এ ঘটনায় মারধরের শিকার চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ সেশনের তুষার দে নামে আরেকজন শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর চিঠি দিয়েছেন। অভিযুক্তরা হলেন- চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২-২১ সেশনের আলমাস মাহফুজ রাফিদ (মূল হোতা), ফরহাদ হোসেন সুমন, সাগর রয় অনিক ও মেহেদী হাসান। অভিযুক্ত ৪ জনই চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় শহরে চারুকলা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে বাস থেকে নামার পর আলমাস (২০২০-২১) আমাকে জোরপূর্বক রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১নং রুমে নিয়ে আটকে রাখে। ওই রুমে চারজন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং মারধর শুরু করে। পালাক্রমে আলমাস, সুমন মেহেদী, সাগর এতে যোগ দেয়ে। সবাই চারুকলা (২০-২১) সেশনের শিক্ষার্থী।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, মারধর শেষে আলমাস হাতে ও গলায় জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। তারা আমাকে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে এবং আমার বর্ষ ‘ফিগার স্টাডি’ কোর্স-১০৩ পরীক্ষা দিতে দেয়নি। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই।
ভুক্তভোগী স্বাগত দাস কালবেলাকে বলেন, আমি পরীক্ষা দিতে সকালে শহরে চারুকলা ইনস্টিটিউটে যাই। ইনস্টিটিউটের সামনে বাস থেকে নামার পরে আলমাস ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে এবং আমাকে একটি রুমে আটকে রাখে। আমি সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসতে চাইলে তারা আমাকে মারধর শুরু করে এবং সিগারেট দিয়ে আমার হাত এবং গলা পুড়িয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী আরও জানান, পরে তুষার দে (২০২০-২১) নামের আরেক ভাই এসে আমাকে বাঁচাতে চাইলে ওনাকেও তারা মারধর শুরু করে। তাকে কেন মারধর করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমাকে কেন মারধর করেছে আমি জানি না। তাদের সঙ্গে আমার পূর্বের কোনো শত্রুতা নেই; তবে আমাদের ‘সিএফসি ও ‘ভিএক্স’ গ্রুপের মধ্যে ঝামেলার জন্যই হয়তো আমাকে মারধর করেছে। আর আলমাস, ওনি আমার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র। ওনার সঙ্গে আমি একই মেসে থেকেছি। তবুও কেন তারা আমাকে মেরেছে আমি জানি না।
ভুক্তভোগী স্বাগত দাসকে বাঁচাতে আসা চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ সেশনের তুষার দে কালবেলাকে বলেন, স্বাগতকে মারছে দেখে আমি তাকে রক্ষা করতে গেলে আমাকেও মুখে ঘুষি মারে আলমাস। আমার সঙ্গেও তারা হাতাহাতি করে। আমি প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মূল হোতা আলমাস মাহফুজ রাফিদকে মোবাইলফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সারা দেননি।
যদিও রুমে আটকে রাখা ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আরেক অভিযুক্ত ফরহাদ হোসেন সুমন। তিনি বলেন, সকালে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এর সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার ব্যাচমেট আলমাস ও জুনিয়র স্বাগতের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়েছে।
মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মেহেদী হাসান নামের আরেক অভিযুক্ত। তিনি বলেন, এটা স্বাগত (ভুক্তভোগী) ও আলমাসের (অভিযুক্ত) মধ্যেকার ঘটনা। তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা থেকেই এমন হয়েছে। মারধরের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক ও ভিএক্স গ্রুপের নেতা মাহির মোহাম্মদ মাহফুজ কালবেলাকে বলেন, আমি পারিবারিক কিছু কাজে ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যদি এ রকম ঘটে থাকে সে যেই গ্রুপের হোক না কেন তার বিচার হতে হবে।
মারধরের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাদাফ খান কালবেলাকে বলেন, প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে এ ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের বিচার করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করতে হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছি এবং প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এ বিষয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগম কালবেলাকে বলেন, যখন ঘটনাটি ঘটে তখন আমি মূল ক্যাম্পাসে একটি প্রোগ্রামে ছিলাম। আমি তাকে (ভুক্তভোগী) প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিতে বলেছি। এ রকম কিছু ঘটে থাকলে মূল অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি আওতায় আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. অহিদুল আলম বলেন, এটি একটি বিবেক বিবর্জিত কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় একটি ন্যক্কারজনক কাজ। আগামীকাল প্রক্টর অফিসে এ নিয়ে মিটিংয়ে আলোচনা ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
মন্তব্য করুন