শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
যবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের ধুলায় মাইক্রোপ্লাস্টিক, বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা। ছবি : সংগৃহীত
মাইক্রোপ্লাস্টিকের নমুনা। ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বে গবেষকদের জন্য বহুল চর্চিত শব্দগুলোর অন্যতম হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক। মায়ের দুধ থেকে শুরু করে মানুষের রক্ত, লিভার, ফুসফুস, কিডনি এমনকি প্ল্যাসেন্টাল টিস্যুতেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব। মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে সারা পৃথিবীতেই চলছে নানা গবেষণা। সম্প্রতি বাংলাদেশে ৮টি বিভাগের শহুরে রাস্তার ধুলাতে (আউটডোর ডাস্ট) স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে এমন পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছে যবিপ্রবির একদল গবেষক। গবেষক দলটি বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের নমুনাতে। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি “ScienceDirect, Journal of Hazardous Materials” (IF: 13.6) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

সাধারণত, যে সকল প্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটার থেকে কম, সেগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। মাইক্রোপ্লাস্টিক যে কোনো প্লাস্টিক পলিমার হতে পারে। প্লাস্টিকের গঠন, রং ও পলিমারের উপর ভিত্তিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। বিভাগীয় শহরগুলোতে সাধারণ মানুষজন বিভিন্ন কারণে রাস্তা, হাট-বাজার, বাসস্টপ, রেলস্টেশন অনেকটা সময় অতিবাহিত করে। যেখান থেকে রাস্তার ধুলাবালির মতোই ধুলাবালির সঙ্গে এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা শ্বাস-প্রশ্বাসসহ অন্যান্য মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, যা মানুষের শরীরে ক্যান্সার এবং ননক্যান্সার জনিত নানা সমস্যা জন্য দায়ী।

মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশে থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিজের দেহে শোষণ ও জমা করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে বিভিন্নি উপায়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহে প্রবেশ করে এ বিষাক্ত পদার্থগুলো মানব শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছানোর বাহক হিসাবে কাজ করে। কিছু মাইক্রোপ্লাস্টিক এন্ডোক্রাইন-ব্যহত রাসায়নিক ধারণ করে যা হরমোনের ভারসাম্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দ্বারা ট্রিগার হতে পারে এবং সামগ্রিক ইমিউন ফাংশনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। মানব শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রবেশ ভ্রূণের বিকাশে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মূলত গবেষক দলটি বিভাগীয় শহুরে রাস্তায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ এবং মানবদেহ ও পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নির্ণয়ের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।

গবেষণাপত্র অনুসারে, বিভাগীয় শহরগুলোর রাস্তার ধূলার নমুনায় গড়ে প্রতি গ্রামে ৫২টি করে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ প্রতি গ্রামে প্রায় ১০৬টি এবং সিলেটে সর্বনিম্ন ৩৫টি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা পাওয়া গিয়েছে। গবেষক দলটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংখ্যা ও এদের পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মানুষের দেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি ও এর মাত্রা নির্ণয় করেছে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি বিভাগভিত্তিক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করেছে ও তার স্থানিক বিতরণ দেখিয়েছেন।

এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাপশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, বর্তমান বিশ্বে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ পরিবেশ এবং মানবজাতির জন্য অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা ও হাটবাজারে, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদিতে আমাদের চলাচল নিত্যদিনের রুটিনের অন্তর্ভুক্ত। এ সময় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসসহ অন্য মাধ্যমে রাস্তায় ধুলা ও বাতাসে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন, শ্বাস- প্রশ্বাসজনিত রোগ, এলার্জি, এন্ডোক্রাইন- ডিসঅর্ডার, মানব প্রজননে ব্যাঘাতসহ ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হতে পারে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার পরে আমরা মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ ও পলিমারের ওপর ভিত্তি করে মানবদেহে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ইকোলজিক্যাল রিস্ক নির্ণয় করেছি। যেখানে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জেলা ব্যতীত বাকি সব বিভাগের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের প্রাপ্তবয়স্করা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দূষণের দিক থেকে ঢাকা বিভাগ সবার থেকে এগিয়ে এবং দ্বিতীয় স্থানে আছে বরিশাল বিভাগ। দেশের ৮টি বিভাগেই সহনশীল থেকে উচ্চ পর্যায়ে পলিমার রিস্ক রয়েছে, যা হতে পারে মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ।

তিনি আরও বলেন, রাস্তার পাশাপাশি আমরা বাসাবাড়ির ধুলাতেও (ইনডোর ডাস্ট) মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আরেকটি গবেষণা চালিয়েছি যেখানে আমরা প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছি এবং সেখানে রয়েছে মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষণা পত্রটি পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে, আশা করি অতি শিগগিরই সেটিও পাবলিশ হবে।

গবেষণাপত্রের শিরোনাম ও লিংক http://“Application of machine learning and multivariate approaches for assessing microplastic pollution and its associated risks in the urban outdoor environment of Bangladesh”. https://doi.org/10.1016/j.jhazmat.2024.134359

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১০

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১১

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১২

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৩

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৪

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

১৫

‘এক ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না’

১৬

জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

১৭

মাদকাসক্ত ছেলেকে কারাগারে দিলেন মা

১৮

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : পরিবেশ উপদেষ্টা

১৯

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নিরাপদ থাকবে যেসব দেশ

২০
X