শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩২
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রীকে এবার ছাত্রলীগমনা বুয়েট শিক্ষার্থীদের চিঠি

বৃহস্পতিবার বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া চিঠি পড়ে শোনান শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা
বৃহস্পতিবার বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া চিঠি পড়ে শোনান শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা

প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখার জোর দাবিতে গত ২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশ। এবার উগ্রবাদী ও নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ও প্রগতিশীল রাজনীতির পরিবেশ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছেন ছাত্রলীগমনা শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই চিঠি পড়ে শোনান শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী, নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সবার কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে এবং সৎসাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।

চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিকে এক প্রকার নিষিদ্ধ কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং আমরা প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারণায় বিশ্বাসী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমরাও অংশ নিতে চাই দেখে দীর্ঘ একটি সময় ধরে মানসিক নিপীড়ন চলে আসছে, যা বর্তমানে আমাদের জীবনের হুমকিতে রূপ নিয়েছে। শুধু স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য যে পরিমাণ বুলিং করা হয়েছে আমাদের ওপর তা অকথ্য। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ভাইয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু এরপরে র‍্যাগিং বা এর সঙ্গে জড়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গের অভিযোগ না থাকলেও সংখ্যালঘু ছাত্রদের ওপর শুরু হয় পাবলিক হিউমিলিয়েশন এবং ডিফেমেশন, যা হয় শুধু স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে। পরে আমরা বুয়েটে ভর্তি হলে আমরাও আমাদের জাতির জনকের আদর্শকে পালন করতে চাইলেই আমাদের সঙ্গে বুলিং ও নানাভাবে আমাদের হয়রানি করা হয়।

নিজেদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নিপীড়নমূলক ঘটনার বর্ণনা করে শিক্ষার্থীরা বলেন, গতবছর সুনামগঞ্জে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ মোট ৩৪ জনকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিকল্পনার অভিযোগে শিবির সন্দেহে আটকের ঘটনায় আমরা মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে বয়কটের ভয় দেখিয়ে মানববন্ধনের প্রথম ছাত্র হওয়ার কারণে আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মনন চর্চার মুক্তমঞ্চ। এখানে মৌলবাদবিরোধী অবস্থান রাখাকে কীভাবে অভিযোগ হিসেবে তুলে ধরা হয় তা আজও জবাবদিহিতা চাওয়া প্রত্যেক ছাত্রের প্রশ্ন। এ ছাড়া, আমাদের নিয়ে শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় বুলিং এবং জবাবদিহিতার ঘটনা। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের দুজন সহপাঠীকে আহসানউল্লা হলে রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত জবাবদিহিতার নামে যে প্রহসনমূলক র‍্যাগিং বা বুলিং এবং কমনরুম ও মাঠে একটানা অপমান করা হয়।

সাম্প্রতিক ঘটনা তুলে ধরে তারা বলেন, চলতি বছরের ২৭ মার্চ দিবাগত রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি হুসাইন সাদ্দাম বুয়েট প্রাঙ্গণে রাতে উপস্থিত হলে তার সঙ্গে বুয়েটে অধ্যয়নরত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বি সৌজন্য বিনিময়ের কারণকে অভিযোগ হিসেবে তুলে ধরলে তদন্ত ছাড়া তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে একাডেমিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হয়। এই আন্দোলন ক্যাম্পাসে শান্তির পরিবেশ নষ্ট করে এবং অনলাইনে হ্যারাসমেন্ট ও ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের হলের রুমে বঙ্গবন্ধু ও আপনার ছবি রাখতে চাইলেও আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা’-বিষয়ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও তার বিরোধিতা করে সমালোচনা করা হয়। যার কারণে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায় আমাদের পিছপা হতে হয়।

নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, সবধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমাদের জীবন হুমকিসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। শিবির দ্বারা পরিচালিত বাঁশেরকেল্লার পক্ষ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নাম, মোবাইল নম্বর, শিক্ষার্থী নম্বর থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ম্যাসেজিং অ্যাপসগুলো ব্যবহার করে। হে দেশরত্ন, বঙ্গবন্ধু তনয়া, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বিশ্বাস করি ভিন্ন-অভিন্ন সকল মতের সাধারণ বুয়েট শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে স্বাভাবিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। আমরা চাই না আমাদের ক্যাম্পাস জঙ্গি তৈরির কারখানা হোক।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতি প্রতিরোধে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে সহযোগিতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বির হলের সিট বাতিলসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ও ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতি পুনরায় চালুর দাবিতে ছাত্রলীগ এক প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে এবং নেতাকর্মী নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে প্রবেশ করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। এরপর সর্বশেষ, গত সোমবার বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। দেশের শীর্ষ এ প্রকৌশল উচ্চশিক্ষালয়ে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই বলে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ আদেশ দেন। এ অবস্থায় ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নান্দাইলে বিএনপির প্রথম একক নারী কর্মী সমাবেশ

অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা বিএনপি’র দুর্বলতা নয় :  ডা. রফিক

টাঙ্গাইলে জামায়াত-ছাত্রশিবিরের ৩৪ নেতাকর্মী খালাস

প্রতিটি খুনের বিচার হতে হবে : জামায়াত আমির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

গণতন্ত্রের লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি : মজনু

সৌদি যুবরাজকে ট্রাম্পের ফোন, যা আলোচনা হলো

বিদ্যুৎ প্রকল্পে অতিরিক্ত ৩ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

দূষণ বিরোধী অভিযানে প্রায় ৮ কোটি টাকা জরিমানা

‘না ডাকলে সীমান্তের শূন্য রেখায় কেউ যাবেন না’

১০

সিলেটকে হারিয়ে টেবিলের চার নম্বরে খুলনা

১১

গণফোরাম থেকে মহিউদ্দিন আবদুল কাদিরের পদত্যাগ

১২

চোখের জলে বিদায় নিলেন ৬ শিক্ষক

১৩

ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

১৪

তুরস্কের চিকিৎসক দলের অর্থায়নে ২৫শ শিশুর সুন্নতে খতনা

১৫

ক্লাবের পর আশ্বাস পেলেন ক্রিকেটাররাও

১৬

স্নাতকে ৪-এ ৩.৯৯ পেয়ে প্রথম ঢাবি শিবিরের প্রচার সম্পাদক সাজ্জাদ

১৭

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স / ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসায় ৪ ডাক্তার

১৮

সিলেটে বইয়ের জন্য শিশু শিক্ষার্থীদের হাহাকার

১৯

মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য ভারতীয় নারীদের আগাম সন্তান জন্মদানের হিড়িক

২০
X