বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এই রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, কোর্টের আদেশ শিরোধার্য।
সোমবার (১ এপ্রিল) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ নির্দেশনা দেওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া জানান উপাচার্য।
উপাচার্য বলেন, কোর্ট যেটা বলবে সেটা আমরা মানতে বাধ্য। কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটা করতে হবে।
এর আগে, সকালে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
এদিকে বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই কর্মকাণ্ডের জন্য তারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন।
রোববার (৩১ মার্চ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতির মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের অবস্থান কেবল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়। ছাত্রদল যখন ২০২১ সালে আহ্বায়ক কমিটি দেয় তখনও আমরা তীব্র আন্দোলন করেছি। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীরা যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরোধী। আর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সেই জায়গা থেকে তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে রাজনৈতিক চর্চায় জড়িতদের বিরোধিতা করে আসছে। বুয়েটের বাইরে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে না বরং তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে ওই দিন রাতে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় নিয়ম অমান্য করে বুয়েটের ভেতরে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অনুপ্রবেশ করার জন্য। ক্যাম্পাসে, হলে কিংবা ক্লাসে কারও ওপর কোনো রকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার।
তারা বলেন, বুয়েটের ইমতিয়াজ রাব্বি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদপ্রাপ্ত এবং ইতোপূর্বে সে তার পদ সরিয়ে নেওয়ার কথা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি। তার সোশ্যাল মিডিয়ায় সে এই পরিচয় ব্যবহার করে। সে এবং তদসংশ্লিষ্ট আরও ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারে তাহলে অতিদ্রুত বুয়েটে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা কেবল সময়ের ব্যাপার- এ আশঙ্কা থেকেই এ আন্দোলন।
উল্লেখ্য, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল দাবির মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তার পর থেকে বুয়েটে কোনো ছাত্র সংগঠন প্রবেশ না করলেও একাধিকবার ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা প্রবেশ করে। আবরার হত্যার পর যতবারই ছাত্রলীগ বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ততবারই উত্তপ্ত হয় ক্যাম্পাস।
মন্তব্য করুন