ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে রমজান উপলক্ষে সেমিনারের মতো কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের জারিকৃত চিঠির সমালোচনা করে এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) এক যৌথ বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, আমরা জেনেছি, গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক সেমিনারের মতো কোনো ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিতে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ, অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস। গত ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। চিঠিটির ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। আমরা মনে করি, এই ধরনের সিদ্ধান্ত পরোক্ষভাবে ইফতার মাহফিলেই নিষেধাজ্ঞা। যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শামিল।
ইউট্যাবের নেতৃদ্বয় বলেন, ওই চিঠিতে যে ধরনের ভাষা ও শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা আরও সঙ্কুচিত করে দেওয়া হলো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় হলো সবার জন্য উন্মুক্ত স্থান। এখানে যে যার ধর্ম-কর্ম বা মতের লালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, পবিত্র রমজান মাসেও রোজা নিয়ে কোনো সেমিনার বা ইফতার মাহফিল করা যাবে না এটা যেমন ঢাবির স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থি তেমনই আমাদের সামাজিক রীতি-নীতিরও বিরোধী সিদ্ধান্ত। একইসঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টে ভূমিকা রাখবে।
ইফতারের গুরুত্ব প্রসঙ্গে নেতৃদ্বয় বিবৃতিতে বলেন, সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ইফতার। পবিত্র রমজানে মাগরিবের আজানের পর ইফতার করা হয়। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মুখে ইফতারের খাবার তুলে রোজা ভাঙেন মুসলমানরা। মুসলমানরা একত্র হয়ে ইফতার করেন। এতে পারিবারিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত হয়। এ ছাড়া ইফতারের মাধ্যমে একাত্মতা, উদারতা ও সামাজিক যোগাযোগ বাড়ে। ইফতার শুধু রোজা ভাঙার উপলক্ষই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের কাছে একটি ঐতিহ্যও। রমজান মাসে সারা দিন না খেয়ে সংযম পালনের পর সন্ধ্যায় যে পানীয় ও খাবার খেয়ে মুসলমানরা রোজা ভাঙেন, সেই ইফতারকে বিশ্বের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা- ইউনেসকো। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর এই স্বীকৃতি দেয় সংস্থাটি।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা আরও বলেন, রোজার মাসে মুসলমানদের কাছে একসঙ্গে কয়েকজন মিলে ইফতার মানেই অন্যরকম আনন্দ। এটা তো আবহমান কাল ধরেই হয়ে আসছে। ইফতার বিশ্ব মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। এধরনের একটি সামাজিক কর্মসূচি ইফতার মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য। এমনকি ইউনেস্কোর স্বীকৃতির প্রতিও অবমাননার শামিল। আমরা শিক্ষক সমাজ অবিলম্বে ঢাবির প্রক্টর অফিসকে ওই চিঠি প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে বর্তমান প্রশাসন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে পরিগণিত হবেন।
মন্তব্য করুন