ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে ৩ মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল মনসুরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে অধ্যাপক নাদিরকে তিন মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। পরে সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠনসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাবির রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বলেন, শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছে। অভিযোগ ওঠায় তাকে চাকরিতে নিয়োজিত রেখে তদন্ত কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। সে কারণে তাকে তিন মাসে ছুটিয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি নিজেও ছুটিতে যেতে চেয়েছেন। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলবে।
এদিকে, ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে ড. নাদির জুনাইদ গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) কালবেলাকে বলেন, অভিযোগপত্রে ভেতরে আছে, আমার জন্মদিনে না কি অভিযোগকারী বাসায় এসেছিলেন, তখন হয়রানি করেছি। কিন্তু আমি বলতে চাই, আমার বিভাগের একজন শিক্ষার্থী আমার গত জন্মদিনে বাসায় এসেছিলেন ফুল নিয়ে। ফুল উপহার দিয়েছেন ওইদিন। অথচ তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, তার আগে থেকেই অর্থাৎ গত দেড় বছর ধরেই তিনি আমার দ্বারা বিভিন্নভাবে মানসিক অত্যাচারের বা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আমার কথা হলো, যিনি ২০২২ সাল থেকেই আমার দ্বারা বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন তাহলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আমার বাসায় কেন আসবেন? আমি তো কাউকে আসার জন্য জোরাজুরি করিনি। তিনি আসছেন স্বেচ্ছায়। তিনি দুপুরের দিকে এসে বিকেল পর্যন্ত ছিলেন এবং বাসার ছাদেও গিয়েছেন। অভিযোগে তিনি বলেছেন, আমি ছাদে তাকে হয়রানি (হ্যারাজ) করেছি। এটা যদি করেই থাকি তাহলে ওই মুহূর্তে তো তার উচিত ছিল এই বাসা থেকে চলে যাওয়ার। কিন্তু তিনি তো বিকেল পর্যন্ত ছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে দুপুরে খেয়েছেন, চা খেয়েছেন বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেছেন এবং এটাও বলেছেন, তিনি আবার আসবেন। ক্রিসমাসের দিন আবার আসবেন তিনি। আবার এসে রান্নাবান্না করবেন এই কথাও আমাকে তিনি বলে গেছেন। এটা তো অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের পরিচয় নির্দেশ করে, জন্মদিনে বাসায় আসছে, আবার বলেও যাচ্ছে, ক্রিসমাসের দিনও আবার আসবেন। তার সঙ্গে আমার এই মাসের গত ৭ তারিখেও কথা হয়েছে। ৬ তারিখে আমার বিরুদ্ধে ফলাফলে ধস নামানোর যে রিপোর্টটি এসেছে সেই রিপোর্টটা সম্পর্কে তার সঙ্গে কথা হয়। ওই শিক্ষার্থী এ বিষয়ে বলেন, এটা একেবারেই অন্যায় হচ্ছে আপনার বিরুদ্ধে। আমরা সবাই আপনার সঙ্গে আছি। আপনি চিন্তা করবেন না। তিনি আমাকে এই কথাগুলো বললেন এবং ৯ তারিখ রাতেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে তিনি একদিন রাতে আমাকে ফোন দিয়েছেন। আমি ফোন ধরতে পারিনি। পরের দিন আমি মেসেজ করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সে কেন ফোন দিয়েছিল। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন কোনো দরকার ছিল না, এমনি ফোন দিয়েছিলাম। এখন কথা হলো, যদি তাকে বিগত দেড় বছর ধরে আমি হ্যারাস করেই থাকি, তাহলে নভেম্বর মাসে কল দিয়ে এমনি কল দিয়েছি বলার কথা নয়। আমি নভেম্বর মাসেই একটা টেলিভিশনের টকশোতে গিয়েছিলাম। সেটার ভিডিও ক্লিপ দেখে তিনি বলেছিলেন, খুব ভালো লেগেছে। সবসময় তার সঙ্গে ভালোভাবেই কথাবার্তা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তার কাছ থেকে একটি মেসেজ এসেছিল। তিনি তাতে লিখেছিলেন, আশা করি আপনার শুভ এবং সুন্দর প্রভাব আমার ভিতর এবং বাহিরকে তথাকথিত বাহ্যিক সুন্দরের সংজ্ঞা ছাড়িয়ে সত্যি সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে। আমার কথা হলো, যদি আমি তাকে দেড় বছর ধরে হ্যারাস করে থাকি তাহলে গত সেপ্টেম্বরে তিনি আমাকে এই কথা কী করে লেখেন? আমি খুব বিস্মিত হয়েছি, যার সঙ্গে আমার এ রকম এক ধরনের যোগাযোগ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে, তার কাছ থেকেই এই ধরনের অভিযোগগুলো আসছে। এটা কেন এই সময় আসল? এ সময় হঠাৎ করে ১টা মিথ্যা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আসার পরপরই এই অভিযোগটি আসল এমন একজনের কাছ থেকে যার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিচারের দাবিতে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেন। ওইদিন রাতেই ১৩ থেকে ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মন্তব্য করুন