প্রথমবারের মতো মানুষের শ্বাসনালিতে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিকের অবস্থান ও গতিবিধি শনাক্তে বিশেষ মডেল তৈরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. সাইদুল ইসলাম ও তার গবেষক দল।
মানুষের শরীরে কীভাবে দূষিত কণা পরিবহন করে এবং তার প্রভাব কী এটা নিয়ে সাইদুল ইসলাম গবেষণা শুরু করেন ২০১৪ সালে। পরে ২০২২ সালে মানুষের শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্তে সফল হন তিনি।
গবেষণাটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফিজিক্স অর্গ, এআইপি নিউজ, মাইক্রোসফট নিউজ এবং সাইন্স ডেইলির মতো প্রায় দুই শতাধিক আন্তর্জাতিক মিডিয়া এ জার্নালটি নিউজ ও প্রবন্ধ হিসেবে কাভার করেছে।
বিশ্বখ্যাত অল্টমেট্রিক প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষণাটি গুণগত মান এবং অনলাইনে শীর্ষে অবস্থান করছে। অল্টমেট্রিক বলছে, তাদের সংরক্ষণে থাকা ২.৫ কোটি গবেষণার মধ্যে এটি টপ। এ গবেষণাটির মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের কাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভয়াবহতার খবর পৌঁছে গেছে।
শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন এবং জমা হওয়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে একটি কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিকস মডেল তৈরি করেছেন তারা। মাইক্রোপ্লাস্টিকের বিভিন্ন আকার ও আকৃতির ১.৬, ২.৫৬ ও ৫.৫৬ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুত ও ধীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো অনুনাসিক গহ্বর এবং অরোফ্যারিঙ্কস বা তালুর নরম অংশে জমা হওয়ার প্রবণতা দেখায়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এমনকি ক্যানসারেরও কারণ হতে পারে।
ড. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বড় আকৃতির মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো অধিকাংশ নাকের ভেতরে যে চুল আছে সেখানে আটকে যায়। ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো আকার এবং আকৃতির ওপর ভিত্তি করে ফুসফুসের নিচের অংশে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো ফুসফুসের ভেতরে বাতাসের গতি ও নানা শারীরবৃত্তির কারণে ফুসফুসের আঠালো মিউকাস অংশে জমা হয়। কিছু মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রশ্বাসের মাধ্যমে বের হয়ে আসতে পারে। ফুসফুসের আঠালো মিউকাস অংশে জমা হওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিষাক্ত হতে পারে এবং অবশেষে ক্যানসারসহ নানা ধরনের ফুসফুসের রোগ ঘটাতে পারে। অতি ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো ফুসফুসের আল্ভেওলি (বায়ু কুঠুরি) থেকে অন্যান্য লেয়ার অতিক্রম করে শরীরের রক্তের মধ্যেও প্রবেশ করতে পারে।’
গবেষণার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই গবেষক জানান, বর্তমান মডেলে তারা সিটি স্ক্যান থেকে রেখাচিত্র তৈরি করে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবাহ বিশ্লেষণ করেছেন। এখন একটি পরীক্ষামূলক মডেল তৈরি করতে চান যা দিয়ে পুরো শ্বাসতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকে প্রভাব বুঝে কাজটা করতে পারবেন।
ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে ড. সাইদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘লাখ লাখ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক পানি, বাতাস মাটিতে মিশে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপাদন বাড়ছে এবং বাতাসে এর ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। শ্বাসনালিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে বৃহত্তর সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে পুরো শ্বাসনালির মডেলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবহন বিশ্লেষণ করার পরিকল্পনা করেছেন। এই গবেষণায় বাতাসের আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার মতো পরিবেশগত বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন