বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘মিষ্টি আলুতে ভাতের চেয়ে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। যে কোনো পুষ্টিবিদ ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেয়। মিষ্টি আলুতে ফল ও সবজি উভয় অংশ পাওয়া যায় বলে ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমাদের ভাতের বিকল্প হিসেবে মিষ্টি আলু খেতে হবে।’
ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে বাকৃবি উদ্ভাবিত বাউ মিষ্টি আলু-৫-এর চারা বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাকৃবি উপাচার্য। অনুষ্ঠানে প্রায় দেড় শত কৃষকদের মাঝে বাউ মিষ্টি আলু-৫ বিতরণ করা হয়।
রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের খামারে বাউ মিষ্টি আলুর চারা বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের আচার-আচরণ ও স্বভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু ফোনে, ফেসবুকে স্মার্ট দেখালে হবে না। আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। মাঝে মধ্যে ভাতের বিকল্প অন্য খাবার খেতে হবে। পুষ্টির ভিতরে ভিন্নতা আনতে হবে। সেটি যদি অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন আলু হয় সেটি আরও ভালো।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘পুষ্টি বিবেচনায় মিষ্টি আলুতে শর্করার পরিমাণ ভাতের তুলনায় কম, প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। কোষ্ট্যকাঠিন্য দূর করতে ফাইবার দরকার। যেটি ফল ও সবজির মধ্যে রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম আলুর মধ্যে ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে যেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম ভাতে মাত্র ০.৪ গ্রাম ফাইবার থাকে। আলুতে ক্যালসিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম এবং ভাতে থাকে ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।’
বাউ মিষ্টি আলুর প্রধান গবেষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. এ বি এম আরিফ হাসান খান রবিন।
অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান বলেন, ‘বাউ মিষ্টি আলু-৫ উচ্চ ফলনশীল। এ জাতটি উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৩০ টনের বেশি ফলন দিতে সক্ষম। যেখানে সাধারণ আলু যেখানে হেক্টর প্রতি ফলন দেয় ১০.২৫ টন। বাউ মিষ্টি আলু-৫ এর প্রতিটি গাছে ১.০ থেকে ১.৫ কেজি মিষ্টি আলু পাওয়া যায় । এ জাতটি থেকে ৯০ দিনেও মিষ্টি আলু তোলা সম্ভব। তবে ১০০ থেকে ১১০ দিন বয়সে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়। বাউ মিষ্টি আলু-৫ সারা বছর চাষযোগ্য। তবে রবি মৌসুমে এর ফলন সবচেয়ে বেশি।’
অনুষ্ঠানে কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জি এইচ এম সাগরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজা বেগম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষণা পরিচালক ড. মো আবদুল মালেক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির অতিরিক্ত পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার প্রামাণিক ও ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের (সিআইপি) কান্ট্রি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. দেবাশীষ চন্দ।
বাকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম আরিফ হাসান খান রবিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক বাউ মিষ্টি আলু-৫ জাতটি উদ্ভাবন করেন।
মন্তব্য করুন