জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৭ পিএম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জাবি শিক্ষার্থীর মা

‘বিচার পাব এর তো কোনো নিশ্চয়তা নেই’ 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রাফিক্স : কালবেলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রাফিক্স : কালবেলা

ছোটবোনকে সঙ্গে নিয়ে বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে বাসা থেকে বের হয় সৃজনী। ঘণ্টাখানেক পর মায়ের মোবাইল ফোনে কল আসলো। জানতে পারলেন অজ্ঞাত ট্রাকের ধাক্কায় মুমূর্ষু অবস্থায় মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। দুদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মেয়েকে হারালেন মা দিলশাদ আফরোজ।

গত ৩ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাবিহা আফিফা সৃজনী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।

দুর্ঘটনার ১৫ দিন পর শনিবার দুপুরে রাজধানীর খিলক্ষেতে লেকসিটি কনকর্ডের নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসে কথা হয় তার পরিবারের সঙ্গে। ফাবিহা আফিফা সৃজনীর মা দিলশাদ আফরোজ বলেন, সেদিন কী ঘটেছিল, তা আসলে কেউ জানে না। আমার ছোটো মেয়েটাও খুব স্পষ্টভাবে কিছু মনে করতে পারে না। এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পরই লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল, সেখানেই মেয়ের মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। একটারও তো বিচার হচ্ছে না। আমরা বিচার পাবো এর তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। শুধু শুধু আর ঝামেলা পোহাতে চাই না।

প্রত্যক্ষদর্শী যা বলছেন

কথা হয় দুর্ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সৃজনীর ছোট বোন নোশিন শারমিলির সঙ্গে। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা বাসা থেকে অটোরিকশা করে ৩০০ ফিট রাস্তায় আসি। এরপর রাস্তা পার হয়ে বসুন্ধরা সি ব্লকের গেটে যেতে চেয়েছিলাম। চার লেনের সড়কের প্রথম লেন পার হয়ে দ্বিতীয় লেনে পা দেওয়ার আগে দেখতে পাই যে দূর থেকে একটি ট্রাক আসছে। রাস্তা একেবারে ফাঁকা ছিল, পিছনে আর কোনো গাড়ি ছিল না। তখন আপু আমাকে বলে, ‘তুই আমার হাত ধরে থাক, আমি রাস্তা পার করছি।’ এরপর যখন আমরা শেষ প্রান্তের একেবারেই কাছে তখন আমি আবার ট্রাকের দিকে তাকাই। তখনও ট্রাক এতোটা দূরত্বে ছিল যে আমরা রাস্তা পার হয়ে যেতে পারবো। এরপর কী হলো আমি জানি না। হঠাৎ করে ধাক্কা খেয়ে আমি রাস্তায় পড়ে যাই। উঠে দেখি যে আপু আমার থেকে অনেক দূরে রাস্তায় পড়ে আছে। কয়েকজন পথচারী দৌঁড়ে এসে আপুকে উঠিয়ে এনে রাস্তার পাশে শুইয়ে দেয়। রোদ থেকে বাঁচাতে তার উপর একটি ছাতা মেলে দেয় তারা।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় তখনও আমি কিছু বুঝতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর নীল আরেকটি পিকআপে উঠিয়ে আমাদের কুর্মিটোলা হসপিটালে নেওয়া হয়। ওখান থেকে আমাদের বসুন্ধরা এভারকেয়ার হসপিটালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে যাওয়ার পথে বুঝতে পারি বড় কোনো ঘটনা ঘটেছে। আমার হাত রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। তখন আপুর ফোন থেকে নিজেই ফোন করে ঘটনা আম্মুকে জানাই।

কুর্মিটোলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার সোহাইফা রহমান বলেন, ‘তিতাস নামে এক ব্যক্তি দুপুর ২টার দিকে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে রোগীর অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক হওয়ায় আমরা তাকে ভর্তি করিনি। দ্রুত অন্য সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলি।

পুলিশ যা বলছে

খিলক্ষেত থানার তদন্ত কর্মকর্তা জারফান হোসেন বলেন, সাধারণত যেকোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশকে জানানো হয়। এ ঘটনায় পরিবার কিংবা এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউই আমাদের কিছু জানায়নি। ভিক্টিম মারা যাওয়ার পর আমরা ঘটনা জানতে পারি। যা আমাদের বেশ অবাক করেছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়নি। তাই আমরাও আর এটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।

ভাটারা থানার ওসি বি এম আসাদুজ্জামান বলেন, এমন কোনো ঘটনা এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের কাছে এ ঘটনার কোনো রেকর্ড নেই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লুকোচুরি

এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই প্রতিবেদক সশরীরে কথা বলতে গেলে ডিউটি ম্যানেজার জানান, দুর্ঘটনাস্থল খিলক্ষেত থানার অধীনে হলেও আমাদের হাসপাতাল ভাটারা থানার আওতাধীন। আমরা ভাটারা থানাকে এ ব্যাপারে অবগত করেছি। এ ছাড়া কিছু জানতে চাইলে অফিস টাইমে যোগাযোগ করতে বলে। পরবর্তীতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, পুলিশকে কেনো জানানো হয়নি জিজ্ঞাসা করলে তারা ফোন কেটে দিয়ে নম্বর ব্লক করে দেয়।

প্রশ্ন করতেই রেগে গেলেন শিক্ষিকা

এদিকে দুই দিনে সৃজনীর চিকিৎসা বাবদ এভারকেয়ার হাসপাতালকে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা পরিশোধের পরও ফাণ্ডে থাকা অতিরিক্ত ৫ লাখ টাকা সৃজনীর পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ। সৃজনী মারা যাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য তোলা টাকা এভাবে পরিবারকে দেওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে জানতে সহযোগী অধ্যাপক আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, আমি চাই না সাংবাদিকরা এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাক।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

সৃজনীর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তার সহপাঠীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাই। অথচ একদিন পেরিয়ে গেলেও তার মা মেয়েকে দেখতে হাসপাতালে আসেননি। নিজে অসুস্থ থাকার কথা বললেও একজন মা কিভাবে মেয়ের এমন খবর শুনেও হাসপাতালে না যেয়ে বাড়িতে থাকতে পারেন। এমনকি পরদিন হাসপাতালে এসে সৃজনীর বেঁচে থাকা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। যা খুবই অস্বাভাবিক লেগেছে আমাদের কাছে। এ ছাড়া ময়নাতদন্ত না করে মরদেহ দাফন করা হয়েছে। ফলে পুলিশও চালককে শনাক্তের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। তারা আরও বলেন, সৃজনী মৃত্যুর খবর পেয়ে বিভাগীয় শিক্ষকদের সঙ্গে আমরা প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে আমাদের আটকে দেয়। কোনোকিছু লুকানো না থাকলে কেনো হাসপাতালে যেতে দেওয়া হলো না। আমরা চাই, সার্বিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অতিরিক্ত ওজন কমাবে শীতের যেসব সবজি

জুরাইন রণক্ষেত্র, অবরোধকারীদের কয়েকজন আটক

রাশিয়া শান্তি চায় না, এবার জবাব দিতে হবে : বিশ্বকে জেলেনস্কি

মাছ ধরার নৌকায় ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবমেরিনের ধাক্কা

বেঁচে ফিরব আশা ক‌রিনি

পানের বরজে গাঁজা গাছ

ব্যাংককে রাফসান-জেফার, উড়ো প্রেমের গুঞ্জন (ভিডিও)

জনবল নিয়োগ নিচ্ছে নিটল মটরস, কর্মস্থল ঢাকায়

পাত্র খুঁজছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী মেহউইশ হায়াত (ভিডিও)

ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি

১০

৪২ টাকায় কেনা কলার চিত্রকর্ম ৭২ কোটিতে বিক্রি

১১

এবার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নারী বেছে নিলেন ট্রাম্প

১২

ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা পার

১৩

বিচ্ছেদের পর এই প্রথম এআর রাহমানের পোস্ট

১৪

লঘুচাপের শঙ্কা, এরপরই জেঁকে বসবে শীত

১৫

রংপুর জিলা স্কুল মাঠ নয়, মাহিগঞ্জ কলেজে হচ্ছে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ

১৬

ঢাকা লিগে নিষিদ্ধ ৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জন

১৭

মালয়েশিয়ায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন

১৮

জীবননগরে সাবেক পৌর মেয়র গ্রেপ্তার

১৯

অ্যান্টিগায় মাঠে নামলেই রেকর্ড করবেন মিরাজ

২০
X