ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ঘটা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দুই মাসেরও বেশি সময়ের অচলাবস্থার পর অবশেষে ক্লাসে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে উপচার্য ও উপ-উপচার্যের অব্যাহতিতে চাপা ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এটাকে ন্যায়বিচার পরিপন্থি উল্লেখ করে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার বিচার না হলে ক্লাসে ফিরতে চান না তারা। যারা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করছিল, তারাই আজ অন্ধকার রাজনীতির কবলে বন্দি বলেও উল্লেখ করেছে শিক্ষক সমিতি।
তবে এই অনির্বাচিত শিক্ষক সমিতি কুয়েটের সব শিক্ষকের প্রতিনিধিত্ব করে না বলে উল্লেখ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ঘটা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের পর অচলাবস্থা নিরসনে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপউপাচার্য মো. শরিফুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিনের অস্থিরতার অবশেষে অবসান হওয়ার আশা করছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) সারা দিনই উপচার্য ও উপ-উপাচার্য শূন্য কুয়েট ক্যাম্পাস ছিল অনেকটাই ফাঁকা। আবাসিক হল এলাকায় কিছু শিক্ষার্থীকে দেখা গেলেও ছুটির দিন থাকায় প্রশাসনিক ভবন ছিল তালাবদ্ধ।
আবাসিক হল এলাকায় পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম কালবেলাকে বলেন, তাদের এক দফা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, মাছুদ স্যার তার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি দলের কাছে লিজ দিতে চেয়েছিল। এই কারণে সে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মামলা করতে দ্বিধা করেননি। যে কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ভিসি স্যার ও প্রভিসি স্যারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই আন্দোলনে একক কোনো নেতৃত্ব ছিল না, সবাই মিলে এটা পরিচালনা করেছেন। সামনে কুয়েটকে সংস্কারের জন্য বাকি যে দফাগুলো আছে ধীরে ধীরে তা পূরণ করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তবে এই পরিস্থিতিতে ভিন্ন সুর শোনা গেছে শিক্ষক সমিতির কণ্ঠে। উপাচার্য ও সহউপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার পদক্ষেপকে তারা ‘ন্যায়বিচারের পরাজয়’ আখ্যায়িত করেছেন। এর আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্যাম্পাসের সুনাম নষ্ট করে, ক্যাম্পাসকে বাজি ধরে এটাকে ব্যাটেল গ্রাউন্ড বানিয়ে, কার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। আজও শিক্ষক সমিতি বলেছে, যারা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করছিল, তারাই আজ অন্ধকার রাজনীতির কবলে বন্দি। তাদের মতে, এ কারণেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারির সংকট নিরসনে শিক্ষকদের কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমরা কেউই কখন চাইনি কুয়েছে রাজনীতি প্রবেশ করুক। যে কারণে আমরা সব সময় রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কিন্তু গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত যা যা হলো তা দেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করবে। শিক্ষকরা কয়েক দফায় কিছু শিক্ষার্থী নামধারী ও কিছু বহিরাগতদের দ্বারা কয়েক দফায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই ঘটনার বিচার না হলে ক্লাসে ফিরতে চান না তারা।
এ বিষয়ে অনশনকারী শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, যদি কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক লাঞ্ছনা করে থাকেন, আমরাও তাদের শাস্তি চাই। তবে সেটা একটা সুষ্ঠু তদন্ত কমিটির মাধ্যমে হোক। আগে যে কমিটি তদন্ত করেছিল, তারা একটা বায়াস্ট (পক্ষপাতদুষ্ট) তদন্ত কমিটি ছিল। তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ ছিল। সেই জন্য আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে রিপোর্ট চাই।
মন্তব্য করুন