খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ কামাল এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তারা এখন নিজ নিজ বিভাগে ফিরে যাবেন। প্রায় দুই মাস ধরে তাদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই পদক্ষেপ নিল।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে তার নিজ বিভাগে প্রত্যাবর্তনের জন্য উপাচার্য পদের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমের অব্যাহতির প্রজ্ঞাপনেও তার পূর্বের পদে প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়েছে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
১৪ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া এবং ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ড. মু. মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন। ১৯ এপ্রিল বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালানোর কর্মসূচি পালন করেন। ২৩ এপ্রিল বিকেলে হল খুলে দেওয়া হয়েছে। দুপুরে সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. মাছুদ এবং উপ-উপাচার্যের অব্যাহতির ঘোষণায় প্রায় ৫৭ ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ১টার দিকে জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।
অনশন ভাঙানোর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি বার্তা অনশনরত শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান। সেখানে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা নিরসন ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব পরিচালনার লক্ষ্যে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন