খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের একদফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ২০ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। আন্দোলনরত ৩২ শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়লেও এখনও টলছে না কুয়েট প্রশাসন। ফলে দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে অংশ নেয়। মঙ্গলবার সকালেও তাদের সেখানে দেখা গেছে।
কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সোমবার বেলা দুইটার পর থেকে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা দুর্বার বাংলা পাদদেশের সামনের সড়কে জড়ো হতে থাকে। এরপর বেলা তিনটায় সেখান জড়ো হওয়া দুই শতাধিক শিক্ষার্থী সংঘবদ্ধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্ব দিকে অবস্থান নেয়। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে আমরণ অনশন শুরু করে। বাকি শিক্ষার্থীরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের চারদিকে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করে।
জানা গেছে, একজন শিক্ষার্থী সোমবার রাতে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে অনশন থেকে সরে যায়। অন্য একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক এসে অনশন থেকে নিয়ে গেছে।
এদিকে ছাত্রদের অনশন ভাঙাতে তৎপর রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তর। প্রকাশ্যে বুঝিয়ে ও ভেতরে ভেতরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে অর্ধশতাধিক শিক্ষক সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের আমরণ কর্মসূচি থেকে সরে এসে আলোচনায় বসার প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। সকালে তারা আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। বেলা আড়াইটায় ছাত্র কল্যাণ পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ডেপুটি পরিচালকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত অনশনস্থল স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় অবস্থান নেন। এরপর বিকাল ৩টার পর অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে এসে আলোচনা টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে একাধিক শিক্ষক বক্তৃতা করেন। এ সময় শিক্ষকরা তাদেরকে জুস পান করার অনুরোধ জানিয়ে অনশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। এভাবে টানা আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও শিক্ষার্থীদের নমনীয় করতে না পেরে ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালকসহ শিক্ষকরা সেখান থেকে চলে যান। এবং যাওয়ার সময় তারা বলে যান আমরা আবারও তোমাদের কাছে আসব। আলোচনার সুযোগ সব সময় রয়েছে।
এদিকে অনশনরত শিক্ষার্থীরা ভিসি’র পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনড় থাকে। তাদের সাফ কথা আমাদের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আমরা অনশন থেকে সরবো না। প্রয়োজন হলে আমাদের এখানে মৃত্যু হবে।
অনশনরত সিই বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের এক দফা, এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ। আমাদের দাবি যেদিন মেনে নেওয়া হবে, সেদিন আমাদের অনশন শেষ হবে।
তিনি বলেন, আমরা ইন্টেরিম দিকে তাকিয়ে আছি, ইন্টেরিম কখন আমাদের দিকে তাকাবে? আমাদের কুয়েটে গত দুই মাস ধরে যতটুকু আন্দোলন হয়েছে, শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা রেল ব্লকেট করছি? না রাস্তা ব্লকেট করছি? এমনকি আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করতে গেছি তখন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলাম। শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকার জন্যই কি ইন্টেরিম আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না? ইন্টেরিম কাছে আমাদের প্রশ্ন?
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ যে শিক্ষকরা আমাদের কাছে এসেছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় অনেক দেরি হয়ে গেছে। উনারা যখন আসছে তার আগে আমাদের দমানোর জন্য আমাদের প্রতি মামলা করা হয়েছে, এমনকি আমাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের পরে আবার নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আমাদেরকে দমানো যায়। শুধু এই তদন্ত কমিটি নয়, আজকে আবার শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছিল যাতে আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য বসতে না পারি। এত হামলা, এত বহিষ্কারের পরে ছাত্ররা আর তাদের দাবি থেকে ফেরত যেতে চাই না। আমরা শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব এই কারণে যে তারা শেষ পর্যন্ত আমাদের দাবিগুলোর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছেন।
উল্লেখ্য, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি এই তদন্ত প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার মাধ্যমে শাস্তি বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানায় কুয়েট প্রশাসন।
মন্তব্য করুন