খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করলেন কুয়েট শিক্ষার্থীরা

তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ছবি : সংগৃহীত
তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ছবি : সংগৃহীত

তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে ছাত্রদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাতে কোনো বাধা দেয়নি।

এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে তারা ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে প্রতিটি বিভাগের সামনে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে হল খুলে দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তবে প্রশাসনের কোনো সাড়া না পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি ঘোষণা দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন ঘোষণাটি পড়ে শোনান।

ঘোষণায় বলা হয়েছে, যেহেতু ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ও ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছে; নেট, পানি অফ করে হল থেকে বের করে দিয়েছে এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়ে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে, সেহেতু আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি। এ ভিসিকে অপসারণ আমাদের একমাত্র দাবি। একই সঙ্গে নতুন ভিসির অধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। ঘোষণাপত্রটি পাঠ করার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করার ঘোষণা দেন।

রোববার (১৩ এপ্রিল) ‍দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা এক জোট হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় ফটকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের কেউ বাধা দেয়নি। যদিও বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিষেধাজ্ঞা, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও সন্তান না পাঠাতে অভিভাবককে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছিল কুয়েট প্রশাসন। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর থেকে তারা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে প্রশাসনের সাড়া না পেয়ে খোলা আকাশে তারা অবস্থান করছিল।

এছাড়া সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে কুয়েটের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কুয়েটের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ জানান, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৮ তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তাদের দেওয়া প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট কর্তৃক গ্রহণ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৪ মে থেকে শুরু এবং সব আবাসিক হলগুলো আগামী ২ মে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

একই সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেছেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে হোচেন আলী কুয়েট রোড দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পকেট গেটের সামনে গেলে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উসকানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া ২২ জনের নাম ও পরিচয় এভাবে বাইরের কোনো ব্যক্তির পক্ষে জানা সম্ভব না।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম জরুরি সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে টিউলিপের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু

আ.লীগ চাঁদা নিতো ২০০, ছাত্রদল নেতা চাইলেন ৫০০

ঢাকায় বইছে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস 

বাজারের ব্যাগে ১ কেজি গাঁজা, বাবা-ছেলে ধরা 

ধানমন্ডিতে গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়, অভিযুক্ত সেই যুবক আটক

টাঙ্গাইলে ভিন্ন সেটের প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা, দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেশটির জনগণ নির্ধারণ করবে : যুক্তরাষ্ট্র

ভাতের বদলে মুড়ি খেলে কি সত্যিই ওজন কমে

দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আরেক ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২

আইন পাস করে ইসরায়েলিদের নিষিদ্ধ করল মালদ্বীপ

১০

পশ্চিমা চার দেশকে রুশ গোয়েন্দাপ্রধানের হুঁশিয়ারি

১১

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১২

আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে ইডিসিএলের ৫৪ জনকে চাকরিচ্যুত

১৩

আখাউড়ায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রুবেল, সম্পাদক সাদ্দাম

১৪

সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে নড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

১৫

দীর্ঘ ১৫ বছর পর বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান

১৬

পরমাণু আলোচনা নিয়ে ইরানকে স্টিভ উইটকফের নতুন বার্তা

১৭

অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ জনের

১৮

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আজ

১৯

বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে আহত যুবকের মৃত্যু

২০
X