হল খুলে দেওয়ার দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার রাত ৮টার মধ্যে হল না খুলে দিলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৩ এপ্রিল) কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ফ্যাকাল্টির ডিন ও কুয়েটের সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের কাছে এ আবেদন জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ২টা থেকে কুয়েটের মূল ফটকের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের কাছে যান। শিক্ষকরা তাদের বলেন, সিন্ডিকেটের সভা ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম ও হলগুলো খোলা সম্ভব নয়।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস এলাকা ত্যাগ করে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেন তারা। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের আলোচনা শেষে আইডি কার্ড যাচাই করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী হলে প্রবেশের উদ্দেশে গ্রাম থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন হল না খোলায় তাদের থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের খোলা আকাশের নিচে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, আমরা সবকিছু লিগ্যাল ওয়েতে চাই। আমরা চাই না প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিশৃঙ্খলা হোক। আজকের মধ্যে যদি হল খোলে আলহামদুলিল্লাহ, আর যদি না খোলে আমরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেব। আমাদের সব শিক্ষার্থীই আগামীকালের মধ্যেই কুয়েটে প্রবেশ করবে।
ওবাইদুল্লাহ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আশা ছিল আজই হল খুলবে। কিন্তু কুয়েট কর্তৃপক্ষ যদি হল না খোলে আমরা আপাতত খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করব। আমরা চাই না হলের তালা ভেঙে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রবেশ করতে। তবে যদি দ্রুত হল না খোলা হয় আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, হল ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী হলে থেকে বাইরে টিউশনি করেন। তারা টিউশনি করতে পারছেন না। তারা রাত ৮টার মধ্যে হল খুলে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কর্তৃপক্ষ যদি দাবি পূরণ না করে তাহলে তারা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসের দুটি গেটেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার জন্য লিখিত একটি আবেদন জানিয়েছে। বিষয়টি শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপাচার্যকে জানাচ্ছেন। তবে সিন্ডিকেটের সভা ছাড়া হল খোলা ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন