গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের জন্য বিশ্বের সব দেশে একযোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
ইসরায়েলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সোমবার (৭ এপ্রিল) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
রোববার (৬ এপ্রিল) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে বিবৃতি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির সমর্থিত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা গণহত্যার শিকার গাজার জনগণের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানাই আমরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, গাজার ওপর ইসরায়েলের পৈশাচিক হামলা, শিশুসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড, চিকিৎসা না পাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ। অথচ মুসলিম বিশ্ব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তারা জাতিসংঘ-ওআইসি-সহ বিশ্বনেতাদের এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যা একটি মানবিক সংকট ও বিশ্বব্যাপী সবার বিবেকের এক সমষ্টিগত ব্যর্থতা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলেন, বছরের পর বছর সবার চোখের সামনেই এই গণহত্যা ঘটে চলেছে। এটা কেবল রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি একটি মানবিক সংকট। বিশ্বব্যাপী সবার বিবেকের এক সমষ্টিগত ব্যর্থতা।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা গণহত্যার মুখে চুপ থাকতে পারি না এবং থাকবও না। গাজার নির্যাতিত জনগণের সঙ্গে অটল সংহতি প্রকাশ করে, আমরা ৭ এপ্রিল, সোমবার বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিচ্ছি। এই দিনে আমরা সব শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখব। কোনো ক্লাস নেই, কোনো ল্যাব নেই, কোনো অফিসের কাজ নেই। আমাদের প্রতিবাদ হলো সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠস্বর, যা তথাকথিত সভ্য বিশ্ব উপেক্ষা করে চলেছে।
এ ছাড়া ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ডিআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদালয়, বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (অস্ট), কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি, সিটি ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ আরও অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল। সঙ্গে সেখানে এক মাস ধরে পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে রেখেছে দখলদাররা। এতে সেখানকার পরিস্থিতি দম বন্ধ অবস্থা হয়ে পড়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, গত ১২ ঘণ্টায় দখলদাররা খান ইউনিস এলাকা লক্ষ্য করে সবচেয়ে বেশি হামলা চালিয়েছে। সেখানে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছেন। ইসরায়েলি সেনারা খান ইউনিসের কয়েকটি আবাসিক ভবন ও অস্থায়ী তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে। এতে অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। যারা সেখান থেকেই বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপে মানুষ আটকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সব মিলিয়ে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন