সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাস এলাকায় দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা সংকট। একইসঙ্গে বেড়েছে চুরির সংখ্যা। শুধু তাই নয়, বেড়েছে বহিরাগতদের দৌরাত্ম। ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধের আগেই এমন চুরির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপত্তা শঙ্কায় আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখন পর্যন্ত কোনো শক্ত পদক্ষেপ দেখা যায়নি। যার ফলে ভয় ও সংশয়ে ছুটিতে বাসায় ফিরতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৫ মার্চ) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বাকৃবির পরিবহন শাখা থেকে একটি নোহা মাইক্রোবাস এবং বাসের চারটি টায়ার চুরির ঘটনা ঘটে। যদিও পরে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়।
গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন থেকে রেল ক্লিপ চুরির সময় এক চোরকে হাতেনাতে আটক করেছে রেলগার্ড। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লো-ডাউন ব্রিজ সংলগ্ন রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে। গেটকিপার আওয়াজ শুনে দ্রুত সেখানে পৌঁছান এবং স্কুল ব্যাগে রেল ক্লিপ নিয়ে পালানোর সময় চোরকে ধরে ফেলেন।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা জিমনেশিয়ামের সামনে থাকা মূল লাইনের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে সংযোগ দেওয়া প্রায় ১৫০ গজ তার কেটে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও পোল্ট্রি ফার্ম, শাহজালাল হলের সামনে, ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিদ্যালয়, এগ্রোফরেস্ট্রি এবং নারিকেল বাগান সংলগ্ন এলাকা থেকে তার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মসজিদের সিনিয়র মুয়াজ্জিন মাহমুদুল হাসানের সাইকেল মসজিদের ওজুখানার সামনে থেকে চুরি হয়। শুধু তাই নয়, মসজিদের ওজুর ট্যাপও চুরি হয়েছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত ১০টা নাগাদ ক্যাম্পাসের প্ল্যাটফর্মের কাছে বহিরাগত ২০-২৫ জন ছেলে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করতাম। কিন্তু সাম্প্রতিক চুরির ঘটনাগুলো আমাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে যখন বাসায় যাচ্ছি। কারণ এর আগেও ক্যাম্পাসের আশপাশের মানুষজন হলের লুটপাট চালিয়েছিল ফাঁকা ক্যাম্পাসে। প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ভেটেরিনারি অনুষদের ৩য় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় রাতেও বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন আরও দুর্বল হয়ে যায়। ক্যাম্পাসে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরও উদ্বেগজনক। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে, আমাদের চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যা স্বাধীন শিক্ষাজীবনের পরিপন্থি।
প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নজমুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তা টিম নিয়ে নিরাপত্তা শাখার প্রধানের নেতৃত্বে একটি মিটিং করেছি। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে আনসার, পুলিশ ও নিরাপত্তা টিম নিয়ে মিটিং করেছি। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা কীভাবে জোরদার করা যায় সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। হলের নিরাপত্তার বিষয়ে হলের প্রভোস্ট ব্যবস্থা নেবেন। এ বিষয়ে প্রক্টর হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, প্রক্টরিয়াল টিম ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে প্রতিটি নিরাপত্তা পয়েন্টে পাহারা জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সোমবার ২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ধরনের ত্রুটি না থাকে।
মন্তব্য করুন