স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পূর্বেই আবাসিক হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত, প্রভোস্টের পদত্যাগ এবং হলে বৈধ সিটের দাবিতে ত্রিমুখী আন্দোলন চলছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইফতারের টোকেন নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীকে অপমানের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত ইফতার বয়কট করে বুধবার (১২ মার্চ) কেন্দ্রীয় মাঠে গণ-ইফতার আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা।
ইফতার শেষে বিদ্রোহী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলামের পদত্যাগসহ ৪ দফা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় স্নাতক-স্নাতকোত্তরের রেজাল্টের পর ৩ মাস হলে অবস্থানের সুযোগ, কেন্দ্রীয় আয়োজনে আবাসিক-অনাবাসিক সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং সিট ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণের দাবি তোলেন। এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে আগামী রোববারের (১৬ মার্চ) মধ্যে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে প্রভোস্ট সাইফুল ইসলামকে পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত ও মানহানির প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ৩ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের সম্মানহানির সঙ্গে জড়িত সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত, তদন্ত ব্যতীত প্রশাসন কর্তৃক নেওয়া সব অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা এবং আন্দোলন উসকে দেওয়া ভুঁইফোড় অনলাইন গ্রুপ-পেজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
প্রায় দেড় ঘণ্টা প্রশাসনিক ভবন তালাবদ্ধ থাকার পর ঘটনাস্থলে এসে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীরা সবাই আমার কাছে সমান। বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং জিম্মি করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থেকেই সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের দাবি-দাওয়া বিবেচনায় নিয়ে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে আমি দায়িত্বে থাকবো, অন্যথায় থাকবো না। বুধবার আন্দোলন চলাকালীন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অসৌজন্যমূলক আচরণও করা হয়েছে, যা দুঃখজনক। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে দ্রুত হলে সিটের ব্যবস্থা করা, শিক্ষকদের অসম্মান ও মানহানির বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত এবং ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার ৩ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান এসব ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সব দপ্তর ও বিভাগীয় প্রধানকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো শিক্ষার্থীকে ‘ফেল্টুস’ বলিনি। আমিও ২৪ বছর যাবত শিক্ষকতা করেছি, শিক্ষার্থীর বিষয়টা বুঝি। সম্প্রতি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের যেসব শিক্ষার্থীদের সিট বাতিল হয়েছে তাদের জন্যও ইফতারের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পারিবারিক কারণে আমি বাড়ি চলে যাওয়ায় সময়মতো সেই লিস্টটা পৌঁছানো যায়নি। তবে আমি রাতের মাঝে সেটি পাঠিয়েছি। আর সিট বাতিলের সিদ্ধান্তও আমার একার নয়। এটা প্রভোস্ট কাউন্সিলের সামগ্রিক সিদ্ধান্ত।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রভোস্ট কাউন্সিলে যেসব শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং যেসব বিভাগের স্নাতকোত্তর চালু নেই সেসব বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্নের এক মাসের মধ্যে আবাসিক হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকেই প্রভোস্ট কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন