খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ১৭-ব্যাচের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মাদ অনিক এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ১৭-ব্যাচের মো. মোজাহিদুল ইসলাম রাফি দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও অধিক সময় ধরে জঙ্গি সন্দেহে কারাবন্দি রয়েছেন।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে ঈদের আগে তাদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ হয় অনিক ও রাফি। অনিক ওই দিন সকালে রুমে ঘুমিয়েছিল। হলের অফিস ক্লার্ক এনামুলকে দিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাকে গল্লামারী ঘোষ ডেয়ারির সামনে নিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেয়।
আর রাফিকে গ্রেপ্তার করে তার ভাড়া বাসা থেকে, যেখানে তিনি স্ত্রীসহ বসবাস করতেন। তাদের ১৭ দিন গুম করে রেখে ২৫ জানুয়ারি আদালতে তোলে পুলিশ।
আওয়ামী প্রশাসন জঙ্গি নাটকের স্ক্রিপ্ট সাজিয়ে একে একে ৭টি মামলা দেয় তাদের নামে। যার মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনা। অথচ ওই সময় খুলনার কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষিত তরুণদের কণ্ঠ রোধ করতে একের পর এক জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নিরীহদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর গত সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে অনিক ও রাফি কারাগারে অনশন করেন; কিন্তু তাতেও বর্তমান প্রশাসনের টনক নড়েনি।
তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্যায়ভাবে ওদের ছাত্রত্ব স্থগিত করে। তাদেরকে কোনো রকমের আইনি সহযোগিতা করেনি। সেসময় প্রশাসনের যারা এ কাজে জড়িত ছিলেন তাদের বিচার করতে হবে। আমরা চাই বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের মুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি তাদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেবে।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ফেরত চাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করে আগের দুটি মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়েছি। বিগত প্রশাসন এ নাটকের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা বিভিন্ন প্রকার নাটক সাজিয়ে দুই শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করেছে। মুগ্ধর জানাজা পড়তে আসলে আমার সঙ্গেও বিগত প্রশাসন নাটক করেছিল। স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে মিলে তাদের কাজ ছিল এমন নাটক করা। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার জন্য সতর্ক করেন সবাইকে।
উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে খুব দ্রুতই একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাবো। তার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। তাদের মুক্তির জন্য বর্তমান প্রশাসনের যা করার প্রয়োজন তা করবে।
আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের ডিন প্রফেসর ড. মো. নুর আলম ও প্রধান প্রফেসর শেখ মাহমুদুল হাসান, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর মো. সামিউল হক, হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (এইচআরএম) ডিসিপ্লিনের শিক্ষক মেহেদী হাসান একই ডিসিপ্লিনের ১৭ ও ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আহমাদ উল্লাহ স্বাধীন ও মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ, ইংরেজি ডিসিপ্লিনের ১৭ ব্যাচের টিপু তমিজসহ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন