শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ২৩ ফাল্গুন ১৪৩১
আবু শামা, কুবি
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় কমাতে গিয়ে উল্টো গচ্চা ৮ কোটি!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যয় কমানো ও শিক্ষকদের আবাসিকতার সংকট কাটাতে ৮ কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ডরমিটরি ও গেস্ট হাউস। কিন্তু যথাযথ সুযোগ-সুবিধা না থাকা, এবং আসবাবপত্র ও পরিবেশ নিম্নমানের হওয়ায় ডরমিটরি ও গেস্ট হাউসে তেমন কেউ থাকছেন না। ফলে বাসা ভাড়ার ব্যয় কমাতে গিয়ে উল্টো গচ্চা গেছে এই টাকা। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬৬ জন শিক্ষকের (নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ১৭ জন বাদে) বাসা ভাড়া বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৬ কোটি ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মিত নতুন ডরমিটরিতে সিট রয়েছে ৩৯টি। কোনো শিক্ষক যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিতে থাকেন, তাহলে তাকে ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হয়। ডর্মের সিট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসিক আয় হওয়ার কথা ৯৭ হাজার টাকা। কিন্তু শিক্ষকরা না থাকায় এই আয়ের খাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এদিকে গেস্ট হাউসে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অতিথিদের জন্য প্রতি রুম ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে (রুম ভেদে পার্থক্য আছে) বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে।

গেস্ট হাউস সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বিভাগের কোনো না কোনো কর্মযজ্ঞ থাকে। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিয়ত অতিথিরা আসেন। অতিথিদের বাসা ভাড়া বাবদ বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউস থেকে যেখানে আয় করার কথা, সেখানে আমরা প্রতিনিয়ত খরচ করেই যাচ্ছি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ের খাত বেড়ে চলছে। আর তার ভার বহন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ দেখাশোনা করার দায়িত্ব এস্টেট শাখার। শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসন আমাদের যে নির্দেশনা দেয়, আমরা তা পালন করি। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ডর্মের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। সেখানে আটজন শিক্ষক আবেদন করছিলেন, কিন্তু সেখান থেকেও আবার দুজন শিক্ষক আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ ছাড়া আগের আবেদনের ভিত্তিতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ছাত্র পরামর্শকের সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

গেস্ট হাউসের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, গেস্ট হাউসের আসবাবপত্র কেনার সময় সাবেক উপাচার্যকে বলা হয়েছিল এই জিনিসগুলো দুই নম্বর। এগুলো বেশিদিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি।

সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন শিক্ষকসহ মোট ১২ জন শিক্ষক নতুন ডর্মে অবস্থান করছেন। এদিকে গেস্ট হাউসে ১২টি রুমের মধ্যে ৫টি রুম অতিথিদের জন্য রেডি করা হয়েছে। অন্যগুলোর কাজও চলমান রয়েছে।

উচ্চমূল্যের ডর্মটরিতে শিক্ষকদের অনিহার কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নতুন ডর্মে নানা অসুবিধা রয়েছে। কমন রান্নাঘর, গ্যাস সংকট, নিরাপত্তার ঘাটতি। পরিবার নিয়ে থাকার মতো কোনো পরিবেশ না থাকাকে দায়ী করেছেন তারা। এ ছাড়া পুরোনো ডর্মের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা কম থাকা সত্ত্বেও বেশি টাকা গুনতে হয়।

আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাহমিদা সুলতানা বলেন, ‘আমি কুমিল্লায় নতুন। নতুন ডর্মে কোনো নারী সহকর্মী থাকেন না বিধায় আমি আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এ ছাড়া ওখানে সবকিছুই রুম থেকে আলাদা, যেটা প্রত্যাহারের অন্যতম কারণ।’

এদিকে ডর্মেটরির ভাড়া বাবদ লক্ষাধিক টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও, তা পাচ্ছে না প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরের হিসাব মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বিভাগের শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।

অর্থ দপ্তরের সূত্র আরও জানায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী (সিটি করপোরেশন এলাকা ব্যতীত) কোনো ব্যক্তির বেতন যদি ১৬ হাজার ১০০ টাকা থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি মূল বেতনের ৪০ শতাংশ বাসা ভাড়া বাবদ বেতনের সঙ্গে পাবেন। আর যদি এর বেশি হয়, তাহলে মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বাবদ যোগ করা হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসা ভাড়া বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৬ কোটি টাকারও বেশি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ডর্ম ও গেস্ট হাউস নির্মিত হয়েছিল শিক্ষকদের আবাসিক সংকট দূর করতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আগের প্রশাসন শুধু বিল্ডিং তৈরি করে দিয়েছিল। শিক্ষকদের কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। আর আসবাবপত্রগুলো খুবই নিম্নমানের। যার কারণে শিক্ষকরা আগ্রহ দেখাননি। আমরা নতুন আসবাবপত্র ও সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। আর শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউস ও ডর্ম ব্যবহার করা হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ও লাভবান হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি। খুবই বাজে অবস্থা। অতিদ্রুত এটা চালু করা হবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকরা থাকলে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাবি ছাত্রদলের বাইক সার্ভিসে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেলেন তুহিন

রিজওয়ানা হাসান / ঐক্যের ডাক দেয়া সহজ, কিন্তু ঐক্য প্রতিষ্ঠা সহজ নয়

বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ৪ বছরে সর্বনিম্ন

শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে ববি উপাচার্যের সৌজন্য সাক্ষাৎ

জুলহাসের স্বপ্ন পূরণ করতে চায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

পরীমনির সাবেক স্বামী সৌরভ গ্রেপ্তার

এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ সকালে হার, বিকেলে জয় বাংলাদেশের

ঢাকায় এসে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের

একটি গোষ্ঠী মব জাস্টিসের নামে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে : আমিনুল হক 

১০

উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ বিএনপিবিদ্বেষী : রিজভী 

১১

এবার যুদ্ধে যেতে প্রস্তুতির কথা জানাল যুক্তরাষ্ট্র

১২

ইমনের শতক, বাবুর ঝোড়ো ইনিংসে জয়ে ফিরল আবাহনী-মোহামেডান

১৩

বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে জনগণ : ফখরুল

১৪

নবম রাউন্ডে তাহসিন ও নীড়ের ড্র

১৫

এনসিপি থেকে আরও দুই নেতার পদত্যাগ

১৬

বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স / ডেন্টিস্ট ও সেকমো দিয়ে চলছে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা

১৭

সাভারে ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ

১৮

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪ নেতা বহিষ্কার

১৯

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় কমাতে গিয়ে উল্টো গচ্চা ৮ কোটি!

২০
X