ফলের মাছি-পোকা দমনের লক্ষ্যে ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’ নামে একটি নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। কারণ ফলের মাছি-পোকা সারা বিশ্বের হর্টিকালচার শিল্পের বিকাশে অন্যতম প্রতিবন্ধক। অনেক দেশ এই পোকাকে ‘কোয়ারেন্টাইন পেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করে। মাছি-পোকার সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের আমসহ বিভিন্ন ফল ইউরোপ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) গবেষণার ফলাফল নিয়ে কথা বললে বিষয়টি জানিয়েছেন প্রধান গবেষক কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর খান।
গবেষক ড. মঞ্জুর খান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাছি-পোকা দমনে নানা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ- অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় মাছি-পোকা দমনের জন্য ‘মাসট্র্যাপিং পদ্ধতি’ ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিশেষ ধরনের ট্র্যাপে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করে ধ্বংস করা হয়। ফলে স্ত্রী পোকাগুলো প্রজনন করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে এদের সংখ্যা হ্রাস পায়। বাংলাদেশে প্রচলিত ট্র্যাপের মধ্যে সাধারণত লিউর (এক ধরনের রাসায়নিক বা প্রাকৃতিক পদার্থ যা কীটপতঙ্গ আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফেরোমন ট্র্যাপ বা অন্যান্য ফাঁদের সাথে ব্যবহৃত হয়) এবং সাবান-পানি ব্যবহৃত হয়। যার কার্যকারিতা বজায় রাখতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
ড. মঞ্জুর খান তার গবেষণায় দেখেছেন যে, প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন উদ্ভাবিত ট্র্যাপ ব্যবহার করা গেলে অধিক কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে। তার উদ্ভাবিত ট্র্যাপের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এতে মাছি পোকা মারার জন্য কোনো রাসায়নিক উপাদান (কীটনাশক) বা পানি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। লিউর কর্তৃক আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছি পোকা খুব সহজেই উদ্ভাবিত ট্র্যাপে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু ট্র্যাপের বিশেষ গঠন শৈলীর কারণে পোকাগুলো একবার ট্র্যাপে প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। যার ফলে পোকাগুলো ওই ট্র্যাপের ভেতরে আটকে পড়ে পরিশেষে মারা যায়।
গবেষক ড. মঞ্জুর খান আরও জানান, ‘এই ট্র্যাপটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করা সম্ভব হবে। এতে করে তাদের কম কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে, যার ফলে ব্যয় কমবে এবং ফসলের গুণগত মান বজায় থাকার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা পাবে।’
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, এটি কুমড়া, লাউ, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, আম, পেয়ারা এবং ড্রাগন ফলসহ বিভিন্ন ফসলে সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।
ট্র্যাপটির উৎপাদন এবং কৃষকের নিকট পৌঁছে দিতে সর্বমোট ৫০ টাকার মতো ব্যয় হতে পারে, যা খুবই সাশ্রয়ী এবং কৃষকদের নিকট বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করবে। এই ট্র্যাপ এতটাই টেকসই যে একবার কিনে কৃষক এটি জমিতে কমপক্ষে পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে। তবে শুধু ট্র্যাপের ভেতরের লিউর পরিবর্তন করতে হবে বলে জানান গবেষক।
অধ্যাপক ড. মঞ্জুর খান ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এই গবেষণা শুরু করেন এবং ২০২০ সালে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেন। এ উদ্ভাবিত ট্র্যাপ ব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থায়নে নিরাপদ আম উৎপাদনে অধিকতর গবেষণা চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন