রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসন ভবন অবরোধ এবং বিক্ষোভ করেছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি নিয়োগের আদেশ প্রত্যাহার ও নিজ বিভাগ থেকে এ পদে নিয়োগের দাবি জানানো হয়। এদিন দুপুর পৌঁনে ১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জোহরের নামাজ আদায় করতে বের হতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের বাঁধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। পরে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রস্তাবে তারা কর্মসূচি শেষ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভাড়া করা চেয়ারম্যান মানি না, মানব না’, ‘বহিরাগত চেয়ারম্যান মানি না, মানব না’, ‘টুরিজমের আঙিনায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘দাবি মোদের একটাই, নিজ বিভাগের চেয়ারম্যান’, ‘নিজের ঘরে পরের শাসন মানি না মানবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অন্য বিভাগের শিক্ষককে আমরা সভাপতি হিসেবে চাই না। যারা আমাদের বিভাগকে ধারণ করে তাদের একজনকেই জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ চাই। আমরা দেখেছি বর্তমান উপাচার্য কীভাবে নিজের ইচ্ছামতো স্নাতক পাস ছাড়াই একজনকে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের বিভাগের সভাপতি কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে নোংরা রাজনীতি আছে, যার শিকার আমরা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সাইফ রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রাতের আধারে ফাইন্যান্স বিভাগের একজন শিক্ষককে বদলি করে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে। এতে রীতিমতো আমাদের বিভাগের শিক্ষদের যোগ্যতার দিকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমাদের নিজের বিভাগে যখন যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন তাহলে কেন আমরা বাইরের বিভাগ থেকে সভাপতি নেব। আমাদের বিভাগের আগের সভাপতি, সেও অন্য বিভাগের ছিলেন। আমাদের কিছু না জানিয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছেন। আমরা আর অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি চাই না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘এর আগেও ওই বিভাগের সভাপতি অন্য বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার কেন তাদের সমস্যা হচ্ছে সেটা বোধগম্য নয়। তারপরও উপাচার্য স্যার শিক্ষার্থীদের থেকে স্মারকলিপি নিয়েছে এবং আশ্বাস দিয়েছে এটা আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিবেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখনই এটার সমাধান চায় যেটা আসলে সম্ভব না। এভাবে জিম্মি করে এটা কোনো সভ্য সমাজের কার্যক্রম হতে পারে না।’
এদিকে প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনায় ট্যুরিজম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কর্মকর্তা-শিক্ষার্থীদের এ ধ্বস্তাধস্তির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের বিভাগের বিষয়ে যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না। আমরা রোজা রেখে, তাদের অনুরোধ করেছি, আমাদের নামাজ পড়ার জন্য আপনারা যেতে দেন। কিন্তু তারা আমাদের যেতে দেননি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য তারা এ ধরনের কাজ করেছে। এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সকল কাজ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য সমিতি, ইউনিয়ন মিলে বৃহত্তর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পরে এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব স্বাক্ষরিত এক প্রস্তাবনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হবে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নবনিযুক্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন সভাপতির পদে যোগদান করবেন না। পরে উপাচার্যের প্রস্তাবনা মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি শেষ করেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনকে স্বপদে-স্ববেতনে ও প্রেষণে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে বদলি করা হয়। যোগদানের তারিখ থেকে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী আগামী তিন বছরের জন্য ওই বিভাগের সভাপতি নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদারকে বিভাগের সভাপতির রুটিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন