ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পতিত শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা চার হল ও একটি একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ২৬৭তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন করে শাহ আজিজুর রহমান হল রাখায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শাহ আজিজুর রহমান’ হল, ‘শেখ রাসেল’ হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আনাছ’ হল, ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ হলের নাম পরিবর্তন করে ‘উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দিকা’ হল, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই-৩৬’ হল করা হয়েছে। এছাড়া ‘পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন’ এর পরিবর্তে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন’।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত পত্র মোতাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নাম গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৭তম (সাধারণ) সভার ৬নং প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিম্নরূপভাবে পরিবর্তন করা হলো।
এ দিকে বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন করে শাহ আজিজুর রহমান হল রাখার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংসদ। বুধবার (৫ মার্চ) এক যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে ইবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক এই নিন্দা জানান। একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মাওলানা ভাসানীর নামে নামকরণের আহ্বান জানান তারা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, শাহ আজিজুর রহমানের মতো একজন্য চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর নামে আবাসিক হলের নামকরণ জাতির জন্য এক কলঙ্কজন সিদ্ধান্ত। একই সাথে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থীও। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে লুট হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের বৈষম্যহীন দেশ গড়ার শপথই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শাহ আজিজুর রহমানের নামে আবাসিক হলের নামকরণের মধ্য দিয়ে ইবি প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বলে আমরা মনে করি।
তারা আরও বলেন, শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন একাত্তরে পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আবদুল মোতালেব মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হন এবং রাজস্বমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তান কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি জাতিসংঘে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করলেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।
মন্তব্য করুন