বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মূল আসামিদের গ্রেপ্তার না করা ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে আসামি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীদের একাংশ।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাইয়ের ঘটনার সময় আবু সাঈদ হত্যা মামলায় প্রকৃত অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ১১ জুলাই ছাত্রলীগের হামলায় জড়িতদের বাদ দিয়ে তৎকালীন প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন, যেখানে তৎকালীন ছাত্র উপদেষ্টা সাব্বীর আহম্মেদ চৌধুরী নিরাপদে সরে যেতে পারেন, সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া প্রক্টর শরিফুল ইসলামকে আসামি বানানো হয়েছে। ছাত্রলীগের হামলার পর প্রক্টর স্যারের ওপর হামলার মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি দেননি।
তিনি আরও বলেন, মামলায় প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই শরিফুল ইসলামের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রহসন মেনে নেওয়া যায় না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জাকের হোসেন পাশা বলেন, সারা বিশ্ব দেখেছে যে আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। এরপরও মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। শরিফুল স্যার ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করতে পারেন, কিন্তু তিনি যে অপরাধ করেননি, তার দায় তাকে দেওয়া যায় না। আমরা ব্যক্তির পক্ষে নই, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলছি।
এ সময় ১৬ জুলাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত সময়ে গ্রেপ্তার ও সত্য অনুসন্ধান করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পরবর্তীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল,বেরোবির সাবেক ভিসি হাসিবুর রশিদ, সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ সাতজনের নাম মামলায় নথিভুক্ত করার জন্য সম্পূরক এজাহার দায়ের করেন তিনি। আদালতের আদেশে তাদেরও ওই মামলায় নামীয় এজহারভুক্ত আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গত ১৮ নভেম্বর রাতে নগরীর আলমনগর এলাকা থেকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরেরদিন তাকে আদালতে তুলে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মন্তব্য করুন