জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকায় স্থানীয় বিএনপি নেতা শহিদুল হক সহিদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
সোমবার (০৩ মার্চ) রাতে নির্মাণাধীন ঢালাইয়ের ওপর পা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সম্রাট ধোলাইখাল এলাকার একটি মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে নির্মাণাধীন এক ঢালাইয়ের ওপরে পা দেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়, এরপর স্থানীয় লোকজন মিলে শিক্ষার্থীকে মারধর শুরু করে।
একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের কল দিলে তার বন্ধু হাবিবসহ আরও দুজন ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর স্থানীয় লোকজন হাবিবসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষার্থীকে মারধর করে আটক করে রাখে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আটকে রাখার ঘটনা ফেসবুকে ছড়ালে ক্যাম্পাসের আশপাশে থাকা কয়েকশ শিক্ষার্থী তাদের ছাড়াতে ঘটনাস্থলে যান, এরপরই স্থানীয়রা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ওয়ারি থানার ৩৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সহিদের নেতৃত্বে পুনরায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন স্থানীয়রা।
রাতভর চলা দুপক্ষের সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ভাঙচুর চালানো হয় স্থানীয় কয়েকটি বসতঘর ও পঞ্চায়েত ক্লাবে।
এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ বলেন, আমরা শুনেছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষার্থীকে কারা যেন আটকে রেখেছে। এই মহল্লা অনেক বড় এখন কারা আটকে রেখেছে সঠিক বলতে পারছি না। তবে এখন শিক্ষার্থীরা যা করছে তাতে করে আমরা নিরীহ বাসিন্দা আতঙ্কের মধ্যে আছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও কোনো অ্যাকশন নিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আল ফাহাদ নয়ন বলেন, আমার বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান সম্রাটকে বিনা কারণে স্থানীয় বিএনপি নেতা শহিদুলের নেতৃত্বে মারধর করে এবং তাকে প্রটেক্ট করার জন্য কয়েকজন গেলে তাদেরকে মেরে আটকে রাখে। পরবর্তী আমরা ক্যাম্পাস থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী ছাড়িয়ে আনতে গেলে আমাদের ওপর তারা হামলা চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে আটকে রাখার সাহস তারা কীভাবে পায়। যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ঘটনা শোনার পরে আমি কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, বংশাল, ওয়ারি থানা সবাইকে কল দিয়েছি। তারা ফোর্স পাঠিয়েছে । আটকে রাখা শিক্ষার্থীকে তারা ছেড়ে দিয়েছে । যার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে তাকে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে সহকারী প্রক্টররা রয়েছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ ওয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষার্থী মারধর করে আটকে রাখেন ধোলাইখালের স্থানীয়রা। এরই জেদ ধরে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
‘শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা শহিদুল হক সহিদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়। রাত ৩টা ৩০ মিনিটে পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে,’ বলেন ওসি।
মন্তব্য করুন