জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে আহত ও নিহত শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ঢাকা কলেজের আরবি ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রহমতুল্লাহকে ওএসডি করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের (মাউশি) এক প্রজ্ঞাপনে ওই শিক্ষককে ভোলা সরকারি ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজে বদলি করা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।
ফেসবুকে সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রহমতুল্লাহকে নিয়ে বিশাল শাহা নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, রাজন স্যারের আকস্মিক বদলির সংবাদ দেখে আমার মতো ঢাকা কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই মন ভার, মন খারাপ। নিয়ম মেনে হোক কিংবা নিয়মবহির্ভূত ভাবেই হোক, স্যারের এই বদলি মানি না। ঢাকা কলেজের স্বপদেই বহাল দেখতে চাই স্যারকে৷ কেউ যদি বলেন, ‘বদলির চাকরি, বদলি হবেই, এটাই নিয়ম’ তবে বলছি, যে দেশে অনিয়মেই সব হচ্ছে সেখানে শিক্ষকের জন্য জন্য শিক্ষার্থীদের এই দাবি অস্বাভাবিক কিছু না।
ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির (ঢাকসাস) সাবেক সভাপতি এ জেড ভুঁইয়া আনাস লিখেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকা কলেজের সিংহভাগ শিক্ষক যখন স্বৈরাচারের দোসরদের সহযোগিতা করেছে সেই সময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন রহমতুল্লাহ রাজন স্যার। শুধু জুলাই অভ্যুত্থানেই নয় এর আগেও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যায় পাশে পেয়েছিল এই শিক্ষাগুরুকে। শিক্ষার্থীদের অতি আপন হওয়ায় শিবির তকমাও পেতে হয়েছিল তাকে।
তিনি আরও লিখেছেন, আমি সেই সময় ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি দায়িত্বে। তার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠনটি (আবৃত্তি সংসদ) কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ (নেহাল আহমেদ) বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সংগঠনের দায়িত্বে থাকা রাজন স্যার ও শিক্ষার্থীরা শিবির বলে তকমা দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুতে ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের একজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবির তকমা দিয়ে পুলিশের হাতে দেয় তৎকালীন অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীরা। সেই শিক্ষার্থীকে ছাড়ানোর জন্য আমি থানায় গিয়েছিলাম। এরপর কলেজের একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিক সমিতি কেন এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে সে বিষয়েও কথা উঠেছিল।
তিনি লিখেছেন, এমনকি কলেজের একটি বড় অনুষ্ঠানে তৎকালীন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বক্তব্যে বলেছিলেন, কোনো সংগঠন ছাত্রশিবিরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, কারা তাদেরকে ছাড়ানোর জন্য থানায় যাচ্ছে তাদেরকেও মার্ক করা হচ্ছে। কিন্তু এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। ওই সময় যারা আওয়ামী লীগের পা চেটেছে সেই শিক্ষকরা সবাই বহাল তবিয়তে। অথচ নিজের চাকরির ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো সেই রহমতুল্লাহ রাজন স্যারকে ঢাকা কলেজ থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক, লজ্জাজনক ও হতাশাজনক।
জাহিদ হাসান হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় রাজন স্যারের বদলি মানি না, মানব না।’
সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, জুলাই আন্দোলনে যখন গোটা ঢাকা কলেজ ফ্যাসিস্টের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, কখনো ছাত্রলীগকে খিচুড়ি খাইয়েছে, চিকিৎসার জন্য অর্থ সহযোগিতা করেছে তখনো আমি সাধারণ ছাত্রদের পাশে ছিলাম। তাদের উদ্বুদ্ধ করেছি বিভিন্নভাবে। তারই প্রতিদান হিসেবে এই বদলি। দুঃখ এটাই, যারা ফ্যাসিস্টদের প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিল, ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকা কলেজে কর্মরত আছে তাদেরই হীন টার্গেট হয়েছে আমার মতো সাধারণ শিক্ষকের।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, বদলির কারণ আমাদের জানা নেই। এর আগেও বদলি হয়েছিল। মিনিস্ট্রিতে যোগাযোগ করতে হবে। আর সরকারি নিয়ম হলো তিন বছর পর বদলি করা, আমরা বহু বছর আছি অনেকেই। সব সময় নিয়মে হয় না, নিয়মের বাইরেও বদলি হয়।
মন্তব্য করুন