যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে কালো ব্যাজ ধারণ করে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
সকালে উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রভাতফেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সেখানে উপাচার্য শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান (বাংলা) প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী।
সভার শুরুতে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের চিরকালীন প্রেরণার উৎস। একুশ আমাদের শোষণ, আধিপত্যবাদ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস জোগায়। যার কারণে ৫২-এর পরবর্তীতে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর ২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একুশের ধারাবাহিকতায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই ছাত্র ও তরুণ প্রজন্ম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আর প্রতিটি আন্দোলনের মূলে ছিল- বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করা। বক্তারা আরও বলেন, একুশের চেতনা ও জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়তে হবে।
বক্তারা বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা ভাষাকে আমরা ভালোবাসার পাশাপাশি শ্রদ্ধা করি। মাতৃভাষায় জ্ঞান চর্চা যতটা সহজ, অন্য ভাষায় ততটা কঠিন। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মাতৃভাষায় জ্ঞান চর্চা হয়ে থাকে। তাই বক্তারা আমাদের দেশে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের পুস্তক বাংলা ভাষায় রচিত কিংবা অনুবাদ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সভার শুরুতে বক্তারা ৫২-এর ভাষাশহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, আবু সাঈদসহ সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এবং বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক আইরিন আজহার ঊর্মি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, প্রভোস্ট, পরিচালকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন মসজিদে ভাষাশহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া এবং সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিকেল ৪টা থেকে ৮টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অদম্য বাংলা সংলগ্ন মঞ্চে ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের প্রযোজনায় নাটক ‘লাল জুলাই’ মঞ্চায়িত করা হবে।
মন্তব্য করুন