নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নোবিপ্রবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

শোক পদযাত্রা করেন নোবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি : কালবেলা
শোক পদযাত্রা করেন নোবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি : কালবেলা

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের নেতৃত্বে শোক পদযাত্রা, সশস্ত্র সালাম প্রদান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন, সংক্ষিপ্ত আলোচনা, বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করা হয়।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এ উপলক্ষে নোবিপ্রবির জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি, প্রক্টর অফিস, বিএনসিসি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।

২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের উপস্থিতিতে নোবিপ্রবি শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শোক পদযাত্রা শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।

এ সময় উপাচার্যের উপস্থিতিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজিদ হোছাইন চৌধুরী। পরে নোবিপ্রবির বিভিন্ন অনুষদ, ইনস্টিটিউট, বিভাগ, হল, বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে শহীদ মিনারের পাদদেশে বক্তব্য দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের আজকের এ দিনে ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে বায়ান্ন থেকে শুরু করে একাত্তর, নব্বই ও সর্বশেষ চব্বিশে যারা আত্মত্যাগ করে নতুন একটি বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের স্মরণ করছি। মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদ আবদুস সালাম এই নোয়াখালীরই সন্তান। এই জেলার অনেক প্রতিষ্ঠান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।

উপাচার্য আরও বলেন, আজকে যারা নতুন প্রজন্ম তাদের কাছে ভাষার যে স্বাতন্ত্র্যবোধ এবং জাতিসত্তার যে পরিচয় তা যেন আরও প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে এবং আমরা যেন সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করতে পারি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। প্রমিত বাংলায় যে নতুন পরিবর্তন এসেছে তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলার পাশাপাশি আমাদের যে আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে তার গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রমিত বাংলার চর্চা করব এবং বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা এখানে একটি ‘ভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, যেন ভাষা নিয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, শুধু ফেব্রুয়ারিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে সারা বছর বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন করব। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যতটুকু উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন আমরা তা করব। মূলত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই মহান ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত এবং সর্বশেষ জুলাই-২৪ সহ প্রতিটি আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাই সবার আগে প্রাণ দিয়েছে। আজকের এই দিনে আমি প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে যে ছাত্র, শিক্ষক, জনতা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এ দেশে ভাষার জন্য আমরা জীবন উৎসর্গ করেছি, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। আমরা বারবার নিপীড়িত হয়েছি এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তরুণ যুব সমাজ প্রাণ দিয়েছিল রাজপথে। বায়ান্নতে যে ঘটনাটি ঘটেছিল একাত্তরেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বর্তমানে দৃশ্যমান জুলাই, চব্বিশেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমরা বারবার প্রতিবাদ করেছি বারবার রক্ত দিয়েছি। ১৯৫২ থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। শহীদ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের একটি স্বপ্ন ছিল। আমরা শহীদদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাবো এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

এ সময় নোবিপ্রবির বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, হলের প্রভোস্টসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানমালা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাবের আয়োজনে ‘আলোকচিত্রে ভাষা আন্দোলন’ শীর্ষক প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানি হল প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত হল লাইব্রেরির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন তিনি। প্রভোস্ট ড. আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেখানে হল লাইব্রেরির উদ্বোধন ও সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন উপাচার্য। অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে আরও বক্তব্য দেন নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, গ্রন্থাগারিক ও হলের সহকারী প্রভোস্টরা। এ সময় হলের আবাসিক ছাত্রী ও কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এদিন বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ভাষাশহীদদের উদ্দেশে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পিরোজপুরে জনতার হাতে ভুয়া পুলিশ সদস্য আটক

হবিগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩০ 

ধেয়ে আসছে গ্রহাণু, ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ঢাকাও!

আজহারির মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ

আজ ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই: জামায়াত আমির

 শিক্ষার্থীদের অস্ত্র চালানো শেখাচ্ছে পোল্যান্ড

গঠন হচ্ছে নতুন ছাত্রসংগঠন, আত্মপ্রকাশ আজ

ছাত্রলীগ নেতা মিস্টার গ্রেপ্তার

চীনের বিরল সামরিক মহড়া

১০

জামায়াত নেতার স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

১১

২২ ফেব্রুয়ারি : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

১২

আসছে বজ্রবৃষ্টি, পড়তে পারে শিলা

১৩

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৪

২২ ফেব্রুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৫

১৬

বান্দরবানে অপহরণ চক্রের চার সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

১৭

বগুড়ায় এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ

১৮

বদলি আদেশ প্রত্যাহার দাবিতে ব্যাংকের ভেতর অবস্থান কর্মকর্তার

১৯

টঙ্গীতে সমবায় সমিতির টাকা ফেরতের দাবিতে অবরোধ

২০
X