আকাশে মেঘ দেখলেই শিক্ষার্থীদের এখন আর উঠে দৌড় দিতে হবে না। বাতাসে উলটপালট হবে না বই-খাতা। বসতে হবে না ঘাস বা মাটির ওপর। কারণ তাদের মাথার ওপর এখন ছাদ আছে। চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে নেটযুক্ত দেয়াল। এতে খুব সহজেই প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারবে। এখন থেকে এই ঘরে বসেই বৃষ্টি বাদলের দিনেও মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এলাকার অর্ধশতাধিক অসহায় শিক্ষার্থী।
এই এলাকারই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৮৫ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে দুইদিন বিনামূল্যে টিউশনি দিয়ে আসছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী। এতদিন এসব শিক্ষার্থীও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে অসহায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়াতে পারত না। নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরাও তেমন মনোযোগী ছিল না এবং নিয়মিত আসত না।
অবশেষে এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে এক প্রবাসী দম্পতির কল্যাণে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কৃষিবিদ ও কম্পিউটার প্রোগ্রামার এনামুল ভুঁইয়া মুকুল ও তার সহধর্মিণী কৃষিবিদ ড. নাহিদা ভুঁইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এবং সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার লিটিলকেয়ার চ্যারিটির মাধ্যমে সেমি আধাপাকা একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। যেটির নাম দেওয়া হয়েছে আলোকিত মানুষ স্কুল ঘর।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে এই আলোকিত মানুষ স্কুল ঘরের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ ও অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার লিটিল কেয়ার চ্যারিটির চেয়ারপার্সন ড. নাহিদা ভুঁইয়া।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিবিদ এনামুল ভুঁইয়া মুকুলের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. আরফান আলী, জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারের ৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আলোকিত মানুষ সংগঠনের সভাপতি তাজিজুল ইসলাম তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী।
অনুষ্ঠানে কৃষিবিদ এনামুল ভুঁইয়া মুকুলের ব্যাচের একাধিক বন্ধু-বান্ধবীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আলোকিত মানুষ স্কুল ঘরের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোকিত মানুষ সংগঠনের সভাপতি তাজিজুল ইসলাম তুহিন জানান, ২০১৮ সালে নজরুল হলের টিভি রুমে তিনজন ছাত্রকে নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেয়ে ৫০ জন। প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার সপ্তাহে এই দুইদিন দুপুর ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পড়ানো হয় এসব শিক্ষার্থীকে।
তিনি জানান, শিশু থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী আমাদের স্কুলে রয়েছে। তারা সবাই আশপাশের বিভিন্ন স্কুলে পড়ে। কিন্তু তাদের টিউশনি করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই। নজরুল হলে পরে কৃষি ফ্যাকাল্টির মাঝে পুরাতন শহীদ মিনারের সামনে তাদের পড়ানো হত। তখন প্যাথলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো রফিকুল ইসলাম স্যারসহ অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। তাদের পড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী সহযোগিতা করেন।
তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ এখন অনেক বেড়ে গেল। এই কার্যক্রম যেন কোনোভাবেই বন্ধ না হয় সেই ভূমিকা থাকবে আমাদের।
মন্তব্য করুন