বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, ছাত্রদল সর্বোচ্চ ধৈর্য নিয়ে সব ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী বলতে পারবে না আমরা জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য করি। কেউ বলতে পারবে না, ছাত্রদল জোর-জবরদস্তিভাবে বা প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে রুম দখল করেছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আত্মিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান শহীদ স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৪ ফাইনাল খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, শুরু থেকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি ছাত্রদলের নেতাকর্মী দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হলে আমরা তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ইতোমধ্যে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক পরীক্ষিত ছাত্রদলের ৪০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছি। শুধু তাদের সামান্য মানবিক ভুলের কারণে। আমরা সেই মানবিক ভুলকেও ক্ষমা করিনি, প্রশ্রয় দিইনি।
তিনি বলেন, ছাত্রদল ছাত্র রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ছাত্রদল পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি করে। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি পড়াশোনা করে। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, অহেতুক নয়াপল্টনে কার্যালয়ে যাওয়ার দরকার নেই। তোমাদের ক্যাম্পাস, তোমরা সেখানেই ছাত্র রাজনীতি করবে।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, বিগত ১৮ বছরে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। তাদের ধারণা এসেছে, ছাত্র রাজনীতি বলতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও সর্বক্ষেত্রে পাওয়ার এক্সারসাইজ করতে হবে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ উপহার দিয়েছে ছাত্র সংগঠনকে ভোট চুরির অপরাজনীতির অংশ হতে হবে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্মের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিগত সময়ে নিউমার্কেট ও আশপাশে ছাত্রলীগ কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করত। এখন আর চাঁদাবাজির কথা কেউ বলতে পারবে না। ফ্যাসিস্ট আমলে দীর্ঘদিন ধরে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। বারবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার মুখোমুখি হয়েছি। সেখানে ঢাবির ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছিল তাই নয়, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গিয়েও সেখানে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অতীতে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের অবৈধ মন্ত্রী যদি নিউমার্কেটে আসত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেখানে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হতো। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর-জবরদস্তি করে কর্মসূচিতে নিয়ে যেত। ছাত্রদল প্রমাণ করেছে, একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে জোর-জবরদস্তি করে কর্মসূচিতে নিয়ে যেতে বাধ্য করে না।
ঢাকা কলেজে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের উদ্বোধক হিসেবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মীর মুগ্ধের পিতা মীর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিগত দিনের যে রাজনীতি ছিল সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। দেশের দুর্যোগ মুহূর্তে এগিয়ে আসতে হবে। বিগত দিনের কলুষিত ছাত্র রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিগত সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান, একটি সুষ্ঠু রাজনীতি যেন গড়ে ওঠে এটা খেয়াল রাখবেন। মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস বলেন, সুশৃঙ্খল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছে জুলাই বিপ্লবের কারণে। গত ৩০ বছরে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের এমন আয়োজন দেখিনি। ছাত্রদল সভাপতির নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাপারে যে নির্দেশনা তা ক্যাম্পাসে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পজিটিভ ধারণা পাবে। বৃহত্তর ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আসবে।
এ সময় ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পিয়াল হাসান বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে ছাত্রদলের অবদান রয়েছে।
মন্তব্য করুন